১৯শে মে, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ
আজকের সর্বশেষ সবখবর

মহাপ্রাচীরের দেশে ক্রিকেট

প্রতিবেদক
Marajul Islam
সোমবার, ২৭ জুলাই , ২০২০ ১০:৪১

আপনি এই মুহূর্তে আপনার স্মাটফোনটি ব্যবহার করছেন, ল্যাপটপে বসে আপনার অফিসের কাজ গুলো শেষ করেছেন। অথবা সুদূর প্রবাসে বাস করা প্রিয়জনকে মোবাইল ফোনের মাধ্যমে সরাসরি কথা বলেছেন। ভার্চুয়াল জগতে আপনি বা সবাই যা করছে, তাদের মধ্যে একটা সাধারণ বিষয় আছে। তা হলো আপনি কোন না কোন ভাবে মেইড ইন চায়নার পণ্য ব্যবহার করছেন। হ্যাঁ, বর্তমান ইন্টারনেটের যুগে চায়না বা চীন (যাই বলুন না কেন) আপনার সাথে জড়িয়ে আছে।

চীন ; এই পর্যায়ে এসেছে তাঁদের মেধা, মনন শক্তিকে কাজে লাগিয়ে। একসময়ের দরিদ্র দেশটি পরিশ্রমের মাধ্যমে বর্তমান সময়ের বিশ্ব পরাশক্তিতে পরিণত হয়েছেন। তারপরও, বর্তমানে করোনা ভাইরাস ইস্যু নিয়ে দেশটি অন্যান্য দেশ থেকে নানারকম তিরস্কারপূর্ণ মন্তব্য শুনছে। যদিও পোস্টটি করোনা ভাইরাস বা চীনের মাহাত্ম্য নিয়ে নয়। বরং এমন একটি জিনিস নিয়ে যা সম্পর্কে চীনের বেশীরভাগ জনসাধারণের বিন্দুমাত্র ধারণা নেই। কিন্তু তাদের দেশে ঐতিহ্যবাহী রীতি অনুসারে অনেক মানুষ তা সঙ্গে নিয়ে ঘোরে। ঝিঁঝিঁ পোকা, তবে এটি যে একটি খেলা তার ধারণা বেশীরভাগ লোকেরেই নেই।

আমাদের বাংলাদেশে ক্রিকেটের জনপ্রিয়তা নিয়ে নতুন কোন কিছু বলার নেই। পাশের দেশ ভারত আর পাকিস্তানে একই অবস্থা। এককথায় বলা যায় এই অঞ্চলের প্রধান খেলাই ক্রিকেট। কিন্তু এই অঞ্চলের পাশের দেশ চীনে কিন্তু ক্রিকেট নিয়ে কোন মাথাব্যথা তো দূরের কথা, এটা যে একটি খেলা তা সম্পর্কে তাদের বিন্দুমাত্র ধারণা আছে। এর পিছনে প্রধান কারণ হিসেবে রয়েছে, বিট্রিশরা তাদের দেশে ঔপনিবেশিক শাসনের কলোনি স্থাপন করতে পারেনি। শুধু ব্রিটিশরা কেন, কোন সাম্রাজ্যবাদী শক্তিই চীন দখল করে বেশী দিন রাখতে পারে নি।আর একটা কারণ বলা যায় চীনের রক্ষণশীল সমাজ ব্যবস্থা। সেই চার-পাঁচ হাজার বছরের রীতিনীতি তারা এখনো অনুসরণ করে আসছে। সেই হিসেবে ক্রিকেটের মত ভিনদেশী খেলাকে তারা খুব সহজে গ্রহণ যে করবে তা ধারনা করাও বোকামি। তার উপর তাদের শত্রুসম ইউরোপীয় দেরটা!

তারপরও দেরীতে হলে চীনে ক্রিকেটের হাওয়ার গতি বেশী না হলেও আস্তে আস্তে বইছে। সেই হাওয়া কতটুকু ঝড়ে রূপান্তর হতে পারে! আর বর্তমানে কি অবস্থায় আছে? পাশের বাড়ির নতুন খেলাটার হালহকিকত নিয়ে জানানোর চেষ্টা করব।

মিং তিয়ান হুই গ্যাং হাও অর্থাৎ প্রতিশ্রুতিশীল আগামী এই উদ্দেশ্য নিয়ে ২০০৪ সালে চাইনিজ ক্রিকেট কাউন্সিল বা সিসিএ আইসিসিতে যোগদান করেন। চীন এমন একটা দেশ যেখানে খেলা মানে নিছক বিনোদন নয়। খেলা বলতে তাদের কাছে পুরোপুরি পেশাদারি মনোভাব। তাই ক্রিকেটের মত খেলা যা আবার অলিম্পিকে নেই(চীনারা খেলায় সাধারণ অর্জনের চেয়ে পদক জয় বিশেষ করে অলিম্পিকে বড় এবং গর্বের মনে করে) সেধরনের খেলাকে সামনে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া বলা যায় হাত দিয়ে পাহাড় ঠেলার মত কঠিন ছিল। কিন্তু, সেই অবস্থা থেকেও তারা সেই সময় যে ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা করেছিল সেটার জন্য তাদের প্রশংসা করতেই হয়। আসলে যারা নতুন কিছুর স্বপ্ন দেখায় তাদের দৃষ্টি আসলেই অনেক দূরে থাকে। তাদের পরিকল্পনা দেখে তা আসলেই আঁচ করা যায়।২০০৬ সালে করা তাদের পনের বছর মেয়াদি পরিকল্পনা গুলো ছিল,

★২০০৯ সালের মধ্যে সকল ধরনের সুযোগ সুবিধা সম্বলিত দেশ জুড়ে ৭২০ টি ক্রিকেট দল স্থাপন করা।

★২০১৫ সালের মধ্যে দেশজুড়ে ২০,০০০
ক্রিকেটার এবং ২০০০ ক্রিকেট কোচ বানানো।

★২০১৯ সালের মধ্যে বিশ্বকাপে কোয়ালিফাই করা।

★২০২০ সালের মধ্যে টেস্ট স্ট্যাটাস পাওয়া।

২০০৯ সালে চীন এসিসি চ্যালেঞ্জ ট্রফিতে অংশগ্রহণ করেন। এর মাধ্যমে তাঁরা প্রথমবারের মত কোন স্বীকৃত আন্তর্জাতিক টুর্নামেন্টে অংশগ্রহণ করেন। যদিও তারা গ্রুপ পর্বের সবগুলো ম্যাচ হেরে যায়। যার মধ্যে ছিল ইরান এবং মালদ্বীপের বিপক্ষে যথাক্রমে ৩০৭ এবং ৩১৫ রানে হেরে যাওয়া। গ্রুপ পর্বে কোন ম্যাচ না জিতলেও সপ্তম স্থান নির্ধারনী ম্যাচে তাঁরা মায়ানমারকে ১১৮ রানে হারিয়ে তাঁদের ইতিহাসের প্রথম কোন ক্রিকেট ম্যাচ জয়ের স্বাদ পায়।

২০১০ সালে তাঁদের দেশে অনুষ্ঠিত এশিয়ান গেমসের ক্রিকেট ইভেন্টে তারা অংশগ্রহণ করে, সেখানে কোয়াটার ফাইনালে পাকিস্তানের বিপক্ষে হেরে আসর থেকে বিদায় নেয়। সেখানে তাঁদের নারী দল হয় চতুর্থ। এশিয়ান গেমস ছাড়াও ২০১০ সালে চীন দল এসিসি চ্যালেঞ্জ ট্রফিতে অংশগ্রহণ করে এবং সেখানে ষষ্ঠ হয়। ২০১২ সালেও এই টুর্নামেন্টে একই রেজাল্ট দেয়। তারপর আর কোনসময় এই টুর্নামেন্টে অংশগ্রহণের যোগ্য হতে পারে নি। আর এসিসি টি-টোয়েন্টি কাপে ২০০৯ সালে অংশ নিয়ে নবম হলেও এর পর আর কোনসময়ই কোয়ালিফাই করতে পারে নি। তবে, ২০১৮ সাল থেকে আইসিসি তার প্রতিটি সদস্য দেশকে টি-টোয়েন্টি স্ট্যাটাস দেয়। অর্থাৎ যখন দুই সদস্য দেশ কোন টি-টোয়েন্টি ম্যাচে একে অপরের মুখোমুখি হবে তখন তা আন্তর্জাতিক ম্যাচের স্বীকৃতি পাবে। সেই হিসেবে চীন দলও টি-টোয়েন্টি স্ট্যাটাস পাওয়া দল। কিন্তু এখনো তারা কোন আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলে নাই।

চীন পুরুষ ক্রিকেট দল সেভাবে সফলতা অর্জন না করতে পারলেও নারী দলকে সেই তুলনায় বেশ সফলই বলা যায়। ২০১৮ সালে আইসিসি তাঁদের সকল সহযোগী দেশকে টি-টোয়েন্টি স্ট্যাটাস দিলে চীন দলও সেই আওতায় পড়ে। তারপর থেকে তাঁরা মোট ১৬ টি-টোয়েন্টি ম্যাচ খেলে সমান ৮ টিতে জয় পায় এবং পরাজিত হন। এছাড়া তাঁরা ২০১০ সাল এবং ২০১৪ সালের এশিয়ান গেমসে অংশগ্রহণ করেন। দুইবারই চতুর্থ থেকে টুর্নামেন্ট শেষ করেন। ২০১৫ সালের ওমেন্স টি-টোয়েন্টি ওয়ার্ল্ড কাপ কোয়ালিফায়ারে তাঁরা ষষ্ঠ হন। এছাড়াও ইস্ট এশিয়া কাপে ২০১৫ আর ২০১৯ সালে শিরোপা জিতেন। ২০১৭ সালে হন তৃতীয়। যদিও তাঁদের নারী দল সর্বপ্রথম ক্রিকেট বিশ্বের নজরে আসেন ২০১৪ সালে ১৪ রানে অলআউট হয়ে। সে সময় এটাই ছিল টি-টোয়েন্টি ইতিহাসের সর্বনিম্ন স্কোর।

সাংহাই ক্রিকেট ক্লাব

২০০৪ সালে আইসিসির সদস্য এবং ২০১৭ সালে আইসিসির সহযোগী দেশ হলেও চীনে ক্রিকেট চর্চার ইতিহাস কিন্তু বেশ পুরনো। ১৮৫৮ সালে ব্রিটিশ নেভী অফিসার এবং সাংহাই একাদশের মধ্যে সর্বপ্রথম চীনে কোন ক্রিকেট ম্যাচ হয়। তবে ধারনা করা হয় যে, সাংহাই ক্রিকেট ক্লাব প্রতিষ্ঠা হয় আরও কয়েক বছর আগে। ১৮৬৩ সালে সাংহাই রেসকোর্স ময়দানকে তাঁদের নিজস্ব মাঠে রূপান্তর করে। ১৮৬৬ সাল থেকে চীন স্বাধীন হওয়ার আগ পর্যন্ত তাঁরা হংকং ক্রিকেট ক্লাব এবং সিঙ্গাপুর ক্রিকেট ক্লাবের মধ্যে হোম এবং এওয়ে ভিত্তিতে ম্যাচ আয়োজন হত। তারপর চীন স্বাধীন হওয়ার পর তাঁরা বিভিন্ন ক্রিকেট ক্লাবের বিপক্ষে নিয়মিত প্রীতি ম্যাচ খেলতে থাকেন।

এসএসসি ট্রফি

সাংহাই ক্রিকেট ক্লাব তাঁর মেম্বার ক্লাবের মধ্যে প্রতি বছর তিন স্তর সিস্টেমে টুর্নামেন্ট আয়োজন করে। তিন স্তরের মধ্যে ডিভিশন-১ এ ৮ দল নিয়ে হয় ৪০ ওভারের ম্যাচ। ডিভিশন-২ এবং ডিভিশন-৩ এ ৪ দল নিয়ে যথাক্রমে ৩০ এবং ২৫ ওভারের ম্যাচ হয়।

সাংহাই ক্রিকেট ক্লাব ছাড়াও চাইনিজ ক্রিকেট এসোসিয়েশনও বিভিন্ন ঘরোয়া লীগ আয়োজন করে। বিশেষ করে স্কুল এবং কলেজ পর্যায়ে। ২০১৬ সালে আইসিসির এক রিপোর্টে দেখা গেছে, চীনজুড়ে ৪৫,০০০ পুরুষ এবং ৩৫,০০০ মহিলা ক্রিকেটার রয়েছে। আর স্কুল এবং কলেজ পর্যায়ে প্রতি বছরই দলের সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে। ২০১৯ সালে চীন সরকারের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় তাঁদের বন্ধুপ্রতিম রাষ্ট্র পাকিস্তান এবং আফগানিস্তানের বিপক্ষে একটি প্রীতি টুর্নামেন্টের আয়োজন করে। চীন সরকারের আয়োজনে এটিই ছিল প্রথম কোন ক্রিকেট টুর্নামেন্ট।

হংকং, চীনের একটি উপনিবেশ বা অধীনস্থ রাষ্ট্র হলেও বিশেষ আইনের কারণে হংকংয়ে জন্ম নেওয়া কোন নাগরিক চীনের হয়ে খেলতে পারে না। তাছাড়া, হংকংয়েরও নিজস্ব ক্রিকেট দল আছে এবং তাঁরা বিশ্বকাপ এবং এশিয়া কাপেও অংশগ্রহণ করেছে।

চীনে আন্তর্জাতিক স্টেডিয়াম

চীন ক্রিকেট উল্লেখযোগ্য উন্নতি না করতে পারলেও তাঁদের রয়েছে সকল ধরনের সুবিধা সম্বলিত একটি আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়াম।
চীনের গুয়াংজু শহরে গুয়াংডং প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিতরে ১২,০০০ ধারণ ক্ষমতার এই স্টেডিয়ামটি ২০১০ উদ্বোধন করা হয়। এটি চাইনিজ ক্রিকেট স্টেডিয়ামের মালিকানায় রয়েছে। ক্রিকেট ছাড়াও এখানে রাগবি এবং অস্ট্রেলিয়ান ফুটবল অনুষ্ঠিত হয়।২০১০ এশিয়ান গেমসের ক্রিকেট ইভেন্টের ম্যাচ এখানে অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে আফগানিস্তানকে হারিয়ে স্বর্ণ জিতে বাংলাদেশ।

ক্রিকেটে চাইনিজদের ভবিষ্যৎ

ক্রিকেট ম্যানুয়াল বেরিয়েছে চীনা ভাষায়। চীনা ভাষায় ক্রিকেটের মৌলিক জ্ঞানের বইটি লিখেছেন ‘চীনের অক্সফোর্ড’ শিং হুয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের বায়োমেকানিকসের অধ্যাপক ড. লিউ। না, অনুবাদ করেননি। ক্রিকেট খেলা শিখেছেন, আম্পায়ারিং ও প্রশিক্ষণ কোর্স করেছেন; তারপরই লিখেছেন বানছো জিয়াও চেং নামের বইটি। বান মানে ব্যাট, ছো অর্থ বল। অর্থাৎ ব্যাট-বলের খেলা। চীনে ক্রিকেটকে বলা হয় বানছো। কিন্তু তারপরও চীনে ক্রিকেটের ভবিষ্যৎ যে উজ্জ্বল তা নিশ্চিন্তে বলা যায় না।

বাংলাদেশের কথাই ধরি। সংবিধান অনুযায়ী বাংলাদেশের সকল জনগণ যে কোন বৈধ কাজই করতে পারে। কিন্তু চীনের বেলায় সেরকম না। সাধারণ জনগণের অনেক কিছু করতেই এখানে সীমাবদ্ধতা রয়েছে। খেলাধুলার মত নিছক বিনোদনের বেলায়ও এ কথা প্রযোজ্য। একে ক্রিকেট হল ভিনদেশি খেলা। চীনা জনগণের বাইরের দেশের সংস্কৃতি আঁকড়ে ধরে থাকার ইতিহাস নেই বললেই চলে। তার সাথে লম্বা সময়ের খেলা এবং অলিম্পিকে ক্রিকেট নেই। সবমিলিয়ে ক্রিকেটে যে, চীন অনেক দূরে এগোবে তা হলফ করে বলা যায় না। কিন্তু অনেক বিশেষজ্ঞ এ ব্যাপারে একমত যে, যদি অলিম্পিকে ক্রিকেট যুক্ত করা হয় তাহলে চীনে ক্রিকেট অনেকদূর এগিয়ে যাবে। কারণ চীনা সরকার অলিম্পিকে পদক জয়ের জন্য বিশাল পরিমাণে বিনিয়োগ করে। চীন সরকার অলিম্পিকের খেলা নিয়ে যতটা আগ্রহী, ক্রিকেটে ততটাই অনাগ্রহী। তাদের মাথায় ঘোরে সোনার মেডেল। যে খেলার সোনা চীনকে দেবে অলিম্পিক শ্রেষ্ঠত্ব, সেই খেলাই তাদের দরকার।

তারপরও চায়নাতে ক্রিকেটের প্রতি আগ্রহ দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। হতেও পারে সেদিন বেশী দূরে নয় যেদিন চীন দল রেগুলার উপরের সারীর দলগুলোর সাথে খেলবে। এর সবচেয়ে বড় উদাহরণ হল হংকং, আরব আমিরাত বা ফিজি এরা যেমন উপমহাদেশীয় খেলোয়াড় নিয়ে তাদের দল গঠন করে। চীন সেক্ষেত্রে তাদের নিজস্ব খেলোয়াড় দিয়ে দল গঠন করে।

ক্রিকেট অর্থনীতিতে চীনা বিনিয়োগ

ক্রিকেটের সবচেয়ে আড়ম্বরপূর্ণ টুর্নামেন্টের নাম নেওয়া হলে সবাই আইপিএল (ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লীগ) এর কথা বলবে। আর এই আইপিএল থেকে যদি চীনের বিভিন্ন কোম্পানির স্পন্সরশীপ সরিয়ে নেয়া হয় তাহলে আইপিএলের অবস্থা কি হবে?

তাহলে বলতেই হবে আইপিএল তার জৌলুশ হারাবে। সম্প্রীতি গালওয়ানে চীন-ভারত লড়াই হলে ভারতের অনেক জায়গা থেকে চীনা পণ্যের বর্জনের ডাক শুরু হয়। এই ডাকের শুরু থেকেই আইপিএল কর্তৃপক্ষ এই ব্যাপারে সরাসরি না বলে দেন। কারণ চীনা বিজ্ঞাপন থেকেই তাদের আয়ের বড় একটা অংশ আসে।

তাছাড়া ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ডের টাইটেল স্পন্সর বাইজুর শেয়ারের বড় অংশই চীনা কোম্পানির নামে।এমনকি সেই দেশের ক্রিকেট দলের আরও সহযোগী স্পন্সরও চায়নিজ মালিকানাধীন কোম্পানির কাছে। তাই বলাই যায় চীন যদি ভারত থেকে তাঁদের বিনিয়োগ সরিয়ে নেয় তাহলে ভারতীয় বোর্ডের আয় অনেকাংশেই কমে যাবে।

এসব ছাড়াও সারা বিশ্বেই মানুষকে সর্বনিম্ন মূল্যে নিত্য প্রয়োজনীয় সামগ্রী দিতে চীনের সুনাম আছে। ক্রিকেট যদি চীনে প্রসারিত হয় তাহলে ক্রিকেটের বিভিন্ন সামগ্রীও কম দামে চীন থেকে আমদানি করা যাবে। ২০০৭ সালে তাঁরা অস্ট্রেলিয়া থেকে প্রথমে ১৫ টি উইকেট (পিচ) আমদানি করলেও, পরে তা নিজেরাই বানিয়ে নেন। এ থেকেই ব্যাপারটা আন্দাজ করা যায়।

চীন ক্রিকেটের বুলবুল

১৩টি টেস্ট খেলেছেন, সঙ্গে ৩৯টি এক দিনের আন্তর্জাতিক ম্যাচ। বিশ্বকাপে বাংলাদেশের অভিষেকে (১৯৯৯) অধিনায়ক হিসেবে দলকে জিতিয়েছেন পাকিস্তানের বিপক্ষে। অভিষেক টেস্টেই সেঞ্চুরি করে নাম লিখিয়েছেন রেকর্ডবুকে। ৩৩ বছর বয়সে অবসর নেওয়ার পর বাংলাদেশের টেস্ট-পূর্ব যুগের এই নায়ক দেশকে কিছু ফিরিয়ে দিতেই যুক্ত হন কোচিংয়ে। কোচিংয়ে তাঁর দীক্ষা অস্ট্রেলিয়া থেকে।তারপর দেশে ফিরে প্রিমিয়ার লীগে আবহনীকে টানা দুই বার চ্যাম্পিয়ন করেন। ২০০৬ সালে এসিসির তখনকার প্রধান নির্বাহী সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম তাঁকে প্রস্তাব দেন চীনে গিয়ে ক্রিকেটের জ্ঞান দিতে।প্রথমে না চাইলেও নতুন কোন চ্যালেঞ্জ গ্রহণের নেশায় পরে রাজি হন। সেখানে ক্রিকেট শেখাতে আমিনুল ইসলাম বুলবুল হয়ে যান আমিন সিয়েন সাং। সেখানে তাঁর পথ মোটেও সহজ ছিল না। তাঁকে ফিরে যেতে হয়েছিল বেসিক ক্রিকেটে। মানে কিভাবে ব্যাট ধরতে হয়, বল করতে হয়। তাছাড়া ব্রিটিশদের খেলা খেলানোতে রাজি করানোও ছিল তাঁর জন্য বিরাট চ্যালেঞ্জ। এসব কিছু চাইনিজ ক্রিকেটের ভিত্তি স্থাপন করার ক্ষেত্রে তাঁর ভূমিকা অপরিসীম। সেই হিসেবে তাকে চীনা ক্রিকেটের জনকও বলা যায়।

Bangladeshi international batsman Aminul Islam (R) teaches China’s Under-19 cricket squad at Bangladesh’s elite sports academy in Savar on the outskirts of . AFP PHOTO/Munir uz ZAMAN (Photo credit should read MUNIR UZ ZAMAN/AFP/Getty Images)

২০০৭ থেকে ২০১১ সাল পর্যন্ত তিনি চীনে থেকে ক্রিকেট প্রশিক্ষণ দিলেও তারপর থেকে মাঠের কাজ ছেড়ে ডেস্কের কাজে মনোযোগ দেন।তিনি যখন দায়িত্ব নেন তখন শতকোটির উপরের জনসংখ্যার দেশটিতে ক্রিকেট খেলা এবং এর সাথে যুক্ত মানুষের সংখ্যা ছিল ৭৫০। সেখান থেকে তিনি ২৯,০০০ এ উন্নীত করেন। বুলবুলের পরে বাংলাদেশের আরেক টেস্ট ক্রিকেটার মাঞ্জারুল ইসলাম লম্বা সময় ধরে কাজ করছেন চীনের ক্রিকেট নিয়ে। এ ছাড়াও, বাংলাদেশ থেকে আরও অনেকেই চীনের ক্রিকেট নিয়ে কাজ করানোর জন্য সেদেশে গেছেন।

সমাপ্তি

চাইনিজ জাতীকে বলা হয় দুনিয়ার সবচেয়ে পরিশ্রমী জাতি। তাঁরা যেসব জিনিসে হাত দিয়েছে সেখানেই পেয়েছে সাফল্য। তবে মূল সমস্যা হল, চীনের জনগণ অতিমাত্রায় রক্ষণশীল। তারা নতুন কোন কিছুকে খুব সহজে গ্রহণ করতে চায় না। বিশেষ করে বাইরের দেশে আবিষ্কার হওয়া যে কোন কিছু। আরও ভেঙ্গে বললে পশ্চিমা দেশের। ক্রিকেটের ক্ষেত্রে তাই।তবে আশা করা যায় উপমহাদেশের মত চীনও একদিন ক্রিকেট নেশায় বুদ হয়ে থাকবে। কোন এক চায়নিজ যুবক উইকেটের সামনে দাড়িয়ে যাবে মহাপ্রাচীরের মত।

ক্রিকেট কি পারবে মহা প্রাচীর টপকে সেদেশের মানুষের মন জয় করতে?

তথ্যসূত্রঃ

১. উইকিপিডিয়া
২. সাংহাই ক্রিকেট ক্লাব ওয়েবসাইট
৩. আইসিসির ওয়েবসাইট
৪. প্রথমআলো
৫. DW News
৬. Gulf News

মতামত জানান :