প্রতিভা থাকলেই যে সেরা হওয়া যায় না, সেটির প্রমাণ রাখছেন লিটন দাস এবং সৌম্য সরকার। ক্লাসিক ব্যাটিংয়ে লিটন দাসের একটা বাউন্ডারি আপনাকে যতোটা তৃপ্তি দিবে তার থেকে বেশী হতাশ করবে আউট হওয়ার দৃশ্যটি। আবার আপনি হালের সৌম্যর শুরুর গল্পে ফিরে গেলে সৌম্যকে নিয়ে একটা গৌরবময় অধ্যায় লিখতে পারবেন, যেখানে থাকবে প্রতিভার স্বাক্ষর রাখা সৌম্যর বেশকিছু সাফল্য! কিন্তু কোথায় এই প্রতিভা? ক্রিকেট মাঠে প্রতিভার ধারাবাহিক সাক্ষর রাখার সময় আসেনি কি এখনো? না-কি প্রতিভা অন্বেষন করতে করতেই কাটিয়ে দিবেন বাকিটা পথ?আসলে কি? এইসব নিয়ে পরে ভাবা যাবে, আসুন প্রতিভাবের কিছু গল্প শুনি!
শুরুতেই সৌম্যর সর্বশেষ ৬ টি ইনিংস তুলে ধরা যাক –
১১, ৬৯, ৭, ০, ৩২ এবং ১; সর্বসাকুল্যে ১২০ রান। এর মাঝে ওপেনিং পজিশনে ১ ইনিংসে করেছেন ১১ রান, ওয়ান ডাউনে খেলা চার ইনিংসে ১০২ এবং সাত নাম্বার পজিশনে এক ইনিংস খেলে করেছেন ৭ রান!
এবার গত পাঁচ বছরে সৌম্যর পারফরম্যান্স দেখে নেওয়া যাক; ২৬-মার্চ ২০১৬ সাল থেকে আজ পর্যন্ত সৌম্য খেলেছে ৪৫ ম্যাচ, যেখানে ২৬.২৪ গড়ে করেছেন ১০৭৬ রান। এই ৪৫ ম্যাচের মধ্যে সবচেয়ে বেশী ১১ টি ম্যাচ খেলা নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে সৌম্যর ব্যাটিং গড় ১৫.৯০, এছাড়াও চার ম্যাচ খেলা আফগানিস্তানের বিপক্ষে ৮.৫০ গড়ে রান করা সৌম্য ১১৭ গড়ে করেছেন ঠিক ১১৭ রান, এছাড়াও ৯২ গড়ে রান করেছেন আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে! তুলনামূলক শক্তিশালী দলের বিপক্ষে সৌম্য এখন এভারেজ পারফরম্যান্স করতেছে সেটা বলতে দ্বিতীয় বার ভাবার কথা নয়!
এতো এতো অফফর্মের মাঝেও সৌম্য সুযোগ পেয়ে যায় বারবার। বাইশ গজে সৌম্যর প্রতিভার বিকাশ শুরুতে ঘটলেও বর্তমান সময়ে টেকনিক কিংবা প্লেসমেন্ট; সবখানেই অনভিজ্ঞের মতো প্রমাণ করতেছে নিজেকে! অবাক করেছে আউট হওয়ার ধরনগুলোও। বাজে ফুটওয়ার্ক, বলের মুভমেন্ট কিংবা অফস্ট্যাম্প খুঁজে না পাওয়া সৌম্য প্রায়ই খোঁচ কিংবা অফ স্ট্যাম্পের বাহিরের বলগুলো গগনে তুলে দিয়ে ফিরেছেন সাজঘরে! আহ; এ যেনো প্রতিভার অপব্যবহার!
সৌম্যর পরে আসি ক্লাসিক লিটনের দিকে। ক্লাসিক ব্যাটিংয়ে ১০ রান করা লিটনের ব্যাটিংও উপভোগ্য, বৈচিত্র্যময়। লিটন ক্রিজে থাকলে মনেহয় তাকে আউট করাই অসম্ভব! কিন্তু যার কাছে নিজের উইকেটের গুরুত্ব নেই তাকে কি আউট করতে হয়? না, সে নিজেই আউট হয়ে আসেন! প্রতিভার স্বাক্ষর রাখতে রাখতে এমন একটা পর্যায়ে পৌঁছেছেন যেখানে লিটনকে নিয়ে আশা দেখা অন্যয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। বছর দুয়েক আগেও যেই মানুষগুলো লিটনকে নিয়ে আশার বাণী শুনিয়েছেন তাঁরাও আজ লিটনকে হতাশার নাম হিসেবে দেখছেন! আসলে প্রতিভা থাকলেই সবকিছু হয়না, প্রতিভার বিকাশ ঘটানোয় আসল। যেখানে ব্যর্থ লিটন!
আচ্ছা হাতাশার নাম হয়ে ওঠা লিটনের সর্বশেষ ৬ ইনিংস কি বলে?
১৪, ২২, ০, ১৯, ০, ২১; সর্বসাকুল্যে ৭৬ রান, সর্বোচ্চ ২২। একজন ওপেনারের যদি এমন পারফর্ম হয়ে থাকে তাহলে কি আর বলার থাকে? ওহ, আরেকটা কথা তো বলায় হয়নি, এই ৬ ইনিংসে তার স্ট্রাইকরেট ৫৯.৮৪; যা জনগনের তথাকথিত ডটবাবা তামিম ইকবালকেও পিছনে ফেলেছে!
গত ৫ বছরে ৩৩.২৫ গড়ে রান করা লিটন দাস সর্বোচ্চ ৭৯.৬০ গড়ে করেছেন ৩৯৮ রান! যা তার মোট রানের তিন ভাগের এক ভাগের থেকে অল্প কিছু বেশী। একটা সময় ভারতের সেঞ্চুরির দেখা পাওয়া লিটনে প্রতিভার বিকাশ ঘটলেও সেটির ধারাবাহিকতা ধরে রাখতে পারেননি তিনি!
ব্যাটিংয়ে ধারাবাহিকতা না থাকলেও সুযোগ পেয়ে যাচ্ছেন দিনের পর দিন। ২০১৫ সালে অভিষিক্ত সেই প্রতিভাবান লিটন এখন তরুণ, এখনো প্রতিভাবান হয়েই আছেন। মাঝে মাঝে বিকাশ ঘটনা, আবারও হারিয়ে যান দূরদেশে! যেখানে বসে নিজের প্রতিভা সঞ্চয় করেন লিটু, কিন্তু বাইশ গজে ফিরলে হারিয়ে যায় প্রতিভা!!
টেকনিক, প্লেসমেন্ট নিয়ে প্রশ্ন না উঠলেও শট সিলেকশন কিংবা বলের মুভমেন্ট বুঝে উঠতে ব্যর্থ আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ৭ বছরের অভিজ্ঞতা সম্পূর্ণ এই ওপেনার। দিনশেষে লিটনরা ব্যর্থ হলেও খেলে যায় প্রতিভাবান হিসেবে। এ যেনো বিসিবির দৃষ্টিশক্তির অভাব!
দিনশেষে প্রতিভাবান লিটন কিংবা সৌম্য; দুইজনের স্কিলের ঘাটতি লক্ষণীয়; ঘাটতি লক্ষণীয় তাদের মনোবল কিংবা বিশ্বাসে! প্রতিভার বিকাশ ঘটাতে ঘটাতে এমন পর্যায়ে এসেছেন যেখানে নিজেদের আত্মবিশ্বাস পৌঁছে গেছে একদম তলানিতে। দিনশেষে দোষী সৌম্য-লিটন, দোষী বিসিবির জেদী সিস্টেম! যেই সিস্টেমগুলো সৌম্য-লিটনের সাথে সাথে বাংলাদেশ ক্রিকেটকেও নিচ্ছে নিচের দিকে। দিনশেষে দুই প্রতিভাবান নিজেদের অপমৃত্যু ঠেকাতে পারবে কি না সেটাই দেখার বিষয়!