ম্যাচ প্রিভিউ
ম্যাচ নাম্বার – ২০
বাংলাদেশ বনাম ইংল্যান্ড
সময়: বিকাল ৪ টায়।
ভেন্যু: শেখ জায়েদ স্টেডিয়াম, আবুধাবি।
সুপার টুয়েলভের লড়াই; প্রথম ম্যাচে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে হারিয়ে ফুরফুরে মেজাজে মরগান বাহিনী। অপরদিকে নিজেদের প্রথম ম্যাচে ফিল্ডিং ব্যর্থতায় হতাশায় নিমজ্জিত হয়ে মাঠ ছেড়েছে টিম বাংলাদেশ। শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে হারের লজ্জা ভুলতে ব্রিটিশদের বিপক্ষে জয় পেতে মরিয়া রিয়াদ বাহিনী। অপরদিকে ইংল্যান্ড চাইবে টানা দুই জয় তুলে নিয়ে সেমিফাইনালের পথে যেতে। গুরুত্বপূর্ণ এই ম্যাচে টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে প্রথমবারের মতো মুখোমুখি হতে চলছে দুই দল। নিজেদের প্রথম দেখায় শক্তির বিচারে ইংল্যান্ড বেশ এগিয়ে থাকলেও বাংলাদেশ লড়াইয়ের জন্য প্রস্তুত। বাইশ গজের লড়াইয়ে কে হাসবে শেষ হাসি সেটি সময়ই বলে দিবে। এর আগে দুই দলকে জেনে নেওয়া যাক একবার…..
বাংলাদেশ:
শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ছোট ছোট ভুলগুলো কুড়ে খেয়েছে কোটি টাইগার ভক্তদের। প্রায় জেতা ম্যাচ হেরে বসেছে ক্যাচ মিসে। দিনশেষে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে হারের স্মৃতি ভুলে নতুন লক্ষ্যে বাইশ গজে নামতে চলছে টিম বাংলাদেশ। গুরুত্বপূর্ণ এই ম্যাচে একাদশে আসতে পারে পরিবর্তন। স্পিনার নাসুমের জায়গায় পেসার তাসকিন ও লিটনের জায়গায় দেখা যেতে পারে সৌম্য সরকারকে। ওপেনিংয়ে নাঈমের সাথে মিডল অর্ডারে দুই অভিজ্ঞ মুশফিক-রিয়াদ; ফিনিশিংয়ে আফিফের সাথে সোহান! ব্যাটে-বলে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে তৈরি সাকিব; স্পিন ডিপার্টমেন্ট সাকিবের সঙ্গী মাহাদী। পেস বোলিংয়ে সাইফ-তাসকিনকে নেতৃত্ব দিবেন কাটার মাস্টার দ্য ফিজ! সবমিলিয়ে সুপার টুয়েলভে নিজেদের দ্বিতীয় ম্যাচে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে নামতে চলছে রিয়াদ বাহিনী।
শক্তির জায়গা:
বাংলাদেশের শক্তির জায়গা বোলিং; আবুধাবির পিচে পেসাররা বাংলাদেশকে এনে দিতে পারে স্বস্তির হাওয়া। পেসারদের পাশাপাশি বাংলাদেশের শক্তির জায়গার অনেকটা জুড়ে সাকিব; ব্যাটে – বলে সাকিব যদি জ্বলে উঠে স্বমহিমায় তাহলে বাংলাদেশ শক্তির বিচারে এগিয়ে থাকবে বেশ কিছুটা। এছাড়াও এক্স ফ্যাক্টর হতে পারে ওপেনারদের কেউ একজন।
নজরে থাকবে যারা:
মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ- মিডল অর্ডার ব্যাটার; দলের প্রয়োজনে হাত ঘুরাতেও পারেন তিনি। মূলত বাংলাদেশের মিডল অর্ডার সামলানোর দায়িত্ব তার কাঁধে। সাথে থাকবে অধিনায়কত্বের দায়িত্ব। শক্তির বিচারে এগিয়ে থাকা ইংল্যান্ডের বিপক্ষে রিয়াদের ব্যাটে বড় স্কোর আশা করবে ভক্তরা।
তাসকিন আহমেদ- গতিতে বেশ উন্নতি করলোও ডেথ ওভারে যেনো এলোমেলো তাসকিন। তবে তার পরিশ্রম আর সাধনা তাকে রোজ নতুন করে স্বপ্ন দেখায়, দেখায় এগিয়ে যাওয়ার রাস্তা। সেই তাসকিন যদি আবুধাবিতে নিজের সেরাটা দিতে পারে তাহলে ইংল্যান্ডের টপ অর্ডার ব্যাটারদের একটা বড় পরীক্ষায় পড়তে হবে৷ দিনশেষে তাসকিন কতোটা মেলে ধরতে পারবে নিজেকে সেটি সময়ই বলে দিবে। তবে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে এই ম্যাচে তাসকিন হতে পারে রিয়াদের তুরুপের তাস!
সম্ভাব্য একাদশ:
নাঈম শেখ, সৌম্য সরকার/লিটন দাস, সাকিব আল হাসান, মুশফিকুর রহিম, মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ (অধিনায়ক), আফিফ হোসাইন, নুরুল হাসান সোহান(উইকেটরক্ষক), মাহাদী হাসান, মোহাম্মদ সাইফউদ্দিন, মোস্তাফিজুর রহমান ও তাসকিন আহমেদ।
ইংল্যান্ড:
‘১৫ বিশ্বকাপে বাংলাদেশের বিপক্ষে হার; সেমির স্বপ্ন ভঙ্গ হওয়া দলটি বলদে গিয়েছে ৬ বছরের ব্যবধানে! এর মাঝে জয় করেছে ওয়ানডে বিশ্বকাপ। গত আসরেও টি-২০ বিশ্বকাপের ফাইনালে উঠেছিলো দলটি। এবারও ফাইনালের লক্ষ্যে আরব আমিরাতে পা রাখা ইংরেজরা শুরুটাও করেছে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে জয় দিয়ে। এবার পালা টানা দুই জয়ে সেমির পথো আরও এক ধাপ এগিয়ে যাওয়ার। টানা দুই জয়ের লক্ষ্যে অপরিবর্তিত একাদশ নিয়ে মাঠে নামার সম্ভাবনা ইংল্যান্ডের। অধিনায়ক মরগানের সাথে দলে আছে বেশকিছু তারকা ক্রিকেটার। জেসন রয়, বাটলার, মঈনদের সাথে রশিদ, মিলসরা দেখাতে পারেন বোলিং তাণ্ডব। এছাড়াও আছেন বেশকিছু গেইম চেঞ্জার। সবমিলিয়ে বাংলাদেশের বিপক্ষে জয় পেতে মরিয়া টিম ইংল্যান্ড নামবে নিজেদের সর্বশক্তি নিয়েই।
শক্তির জায়গা:
ইংলিশদের শক্তির জায়গার অনেকটা জুড়ে আছে ব্যাটাররা। বোলাররাও নেই পিছিয়ে। ব্যাটিং, বোলিং কিংবা ফিল্ডিং; তিন ডিপার্টমেন্টেই দারুণ সাবলীল ইংল্যান্ড। লিয়াম লিভিংস্টোন হতে পারে এক্স ফ্যাক্টর। পিছিয়ে থাকবে না আইপিএল মাতানো মঈনও! আছেন বাটলার, রয়দের মতো ব্যাটার। ডেথ ওভারে জর্ডান ইংল্যান্ডের আশার আলো দেখাতে পারেন আরও একবার।
নজরে থাকবে যারা:
জেসন রয়- ড্যাশিং ওপেনার, বেশ মারমুখীও বটে। ইংল্যান্ডের পরিকল্পনার বেশকিছুটা জায়গা জুড়ে আছেন রয়। নিজের দিনে রয় কতোটা ভয়ংকর সেটির দেখা মিলেছে বাইশ গজে। এবারও রয়ের ব্যাটে বড় স্কোরের আশায় মরগান। রয় যদি ইংল্যান্ডকে একটা উড়ন্ত সূচনা এনে দিতে পারে তাহলে শক্তির বিচারে এগিয়ে থাকা ইংল্যান্ড ম্যাচে এগিয়ে থাকবে অনেকটাই।
আদিল রশিদ- লেগ স্পিনার; বাংলাদেশী ব্যাটারদের অন্যতম ভয়ের কারণ। লেগী স্পিনে নাজেহাল বাংলার ব্যাটাররা। এদিকে প্রথম ম্যাচে রশিদও হয়ে উঠেছিলেন ভয়ংকর! স্পিন ঘূর্ণি কিংবা গুগলীতে রশিদ বাংলাদেশের বিপক্ষে চালাতে পারেন তাণ্ডব। তাইতো তার দিকে থাকবে একটু বেশিই নজর।
সম্ভাব্য একাদশ:
জেসন রয়, জস বাটলার(উইকেটরক্ষক), মঈন আলী, ইয়ন মরগান, লিয়াম লিভিংস্টোন, ডেভিড মালান, জনি বেয়ারেস্টো, ক্রিস ওকস, ক্রিস জর্ডান, আদিল রশিদ ও টাইমল মিলস!
পিচ রিপোর্ট:
আবুধাবির উইকেট হতে পারে বোলিং সহায়ক। পেসারদের সাথে স্পিনাররাও সুবিধা পাবে অনেকটা। ব্যাটারদের সামনে পরীক্ষা হতে পারে এই পিচ। তবে দেখেশুনে খেলতে পারলে ব্যাটাররাও দলের জয়ে রাখতে পারেন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা। এই পিচে এভারেজ স্কোর ১৪১। এখন পর্যন্ত ৫৩ টি টি-২০ ম্যাচে ২৯ ম্যাচ জিতেছে রান তাড়ায়; বাকি ২৪ ম্যাচ জিতেছে আগে ব্যাটিং করা দল। যেখানে সর্বশেষ ৫ টি আন্তর্জাতিক ম্যাচে জয় পেয়েছে উইকেট ব্যবধানে! তাইতো যেকোনো দলই টস জিতে নিতে চাইবে বোলিংয়ের সিদ্ধান্ত। এছাড়াও এই মাঠে দলীয় সর্বোচ্চ টোটাল ২২৫ ও সর্বনিম্ন টোটাল ৮৭।
দুই দলের মুখোমুখি লড়াই হতে চলছে প্রথমবার। নিজেদের প্রথম দেখাশ কে হাসবে শেষ হাসি সেটি দেখতে চোখ রাখুন টিভির পর্দায়; ঠিক বিকাল ৪ টায়।
প্রতিপক্ষ কে, পিচ কেমন কিংবা পরিসংখ্যান কি বলে সেটি দেখার বিষয় নয়। নিজেদের দিনে বাংলাদেশ হতে পারে যেকোনো দলের জন্য ভয়ের কারণ। শুভ কামনা টিম বাংলাদেশ। পুরোনো ব্যর্থতা ভুলে জ্বলে উঠো নতুন শক্তিতে।
