আপনি যতই প্রতিভা নিয়ে জন্মগ্রহন করেন না কেন! আন্তর্জাতিক ক্রিকেট বড়ই নিষ্ঠুর। আন্তজার্তিক ক্রিকেট আপনাকে দুই হাত ভরে দেয় না, কারন কখনও ইনজুরি আবার কখনও টিম কম্বিনেশন; আবার কখন অজানা কোন কারনে আবার কখনও প্রতিভার বিকাশ ঘটাতে না পারলে আপনি হয়ে যাবেন ক্রিকেটের অতীত একটা অধ্যায়। যাকে মানুষ মনে রাখবে না, ভুলতেও সময় নিবে না। আর নির্বাচকরা ছুঁড়ে ফেলতেও ২ বার চিন্তা করবে না।
বাংলাদেশের ক্রিকেট ইতিহাসে যদি দুর্ভাগা কোন খেলোয়াড় থাকে তাহলে সবার উপরের দিকের নামটি হয়ত থাকবে নাজমুল হোসেনের। হ্যাঁ, লিস্ট করলে আপনি অনেক গুলো নাম বলতে পারবেন কিন্তু সহজে বা দ্রুত আপনার মাথা থেকে যে নাম আসবে তা হলো নাজমুল হোসেন। এই নিয়ে হয়ত কোনোপ্রকার সন্দেহ নেই।
১৯৮৭ সালের আজকের দিনে সিলেটের হবিগঞ্জ জেলায় জন্মগ্রহণ করেন বাংলাদেশ জাতীয় দলের পেসার নাজমুল হোসেন। ছোট বেলা থেকে ক্রিকেটকে ভালোবেসে এগিয়ে চলা নামজুল স্বপ্ন দেখতেন লাল-সবুজের জার্সিতে মাঠ মাতানোর। দিনশেষে তার সেই স্বপ্ন পূরণ হয়েছে; তিনি পরেছন লাল-সবুজের জার্সিতে মাঠ মাতাতে।
২০০৪ সালে ওয়ানডে অভিষেক হয় দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে। অভিষেক ম্যাচে তার বোলিং ফিগার ছিল ৬-০১-১৭-০। হ্যাঁ কোন উইকেট নেই তবু ছিলেন ইকোনোমিক্যাল যেটা সে সময়ের সেরা একটা দল ছিল আফ্রিকা, যাদের বিপক্ষে এই বোলিং ফিগার নিসন্দেহে ভালোই বলা যায়। সেদিন উইকেটের দেখা না পেলেও অসাধারণ লাইন- লেন্থ এর জন্য সবার নজরে আসেন। সোজা লাইনে বল করা, লাইন ঠিক রেখে। এটিই ছিলো নাজমুলের সবচেয়ে বড় গুণ। যা ওয়ানডে ক্রিকেটে অনেক কার্যকরী ভূমিকা রাখে প্রতিপক্ষের রান আটকানোর জন্য।

আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে নিজেকে প্রমাণ করতে খুব বেশী সময় নেননি নাজমুল। ক্যারিয়ারের মাত্র ৩য় ম্যাচে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ৪ উইকেট শিকার করা নাজমুল সেদিন নিউজিল্যান্ডকে ২২৪ রানে অল-আউট করতে রেখেছিল গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা। যদিও বাংলাদেশী ব্যাটসম্যানদের ব্যর্থতায় হারতে হয় সেই ম্যাচ। আসলে সেই সময়ে এমন ম্যাচই বেশি দেখা যেত বাংলাদেশের জন্য। শিরোনাম দেখা যেত ব্যাটিং ব্যর্থতায় হারতে হলো বাংলাদেশকে।
২০০৪ সালে ভারতের বিপক্ষে বাংলাদেশের প্রথম জয়ে কোন উইকেট না পেলেও ৭ ওভার বল করে ২৬ রান দেন। নাজমুলের দারুণ ইকোনোমিক্যাল বোলিংয়ে ভারতের ব্যাটসম্যানদের রান তুলতে বেগ পেতে হয়।
২০০৫ সালে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে বাংলাদেশের প্রথম জয়ে ম্যাথু হেইডেনের ভয়ানক হয়ে উঠার সময় দারুণ এক ইয়র্কার বলে সরাসরি বোল্ড আউট করেন নাজমুল যাকে বলা যায় ইউ মিস আই হিট।
এরপর ইনজুরি নাজমুল লাইফ থেকে দুই বছর কেড়ে নেয়, মাঠের বাহিরে থাকতে হয় নাজমুলকে। তবে ফিরে আসেন ২০০৯ সালে। সেই বছর জিম্বাবুয়েকে ৪৪ রানে অলআউট করার ম্যাচে শুরুটা নাজমুলই করেন, তার প্রথম দিকে ভয়ানক স্পেল ছিল ৬-২-১০-২। আর ক্রিকেট ইতিহাসে বাংলাদেশ কোন দলকে সর্বনিম্ন রানে অল আউট করে।
২০০৯ সালে ত্রিদেশীয় টুর্নামেন্ট এর ফাইনালে শ্রীলঙ্কার প্রথম ৬ রানে ৫ উইকেট এর কথা সবাই মনে রাখার কথা সেই ম্যাচে নাজমুলের বোলিং তোপে অসহায় ছিল শ্রীলঙ্কা ব্যাটসম্যানরা। সেদিন নাজমুলের প্রথম স্পেলটা ছিল ৬-৩-৮-৩। একটু কল্পনা করুন তো কেমন ভয়ানক স্পেল করেছিলেন? কিন্তু সেদিনও হারতে হয় আমাদের। সেই ম্যাচের খলনায়ক ছিলেন রুবেল!
২০১০ সালে নিউজিল্যান্ড এর বিপক্ষে বাংলাদেশ জয় লাভ করলেও সেই ম্যাচ এর শেষ দিকে রিটার্ন ক্যাচ নিতে গিয়া ইনজুরিতে পড়েন। সতীর্থরা জয় উদযাপন না করে নাজমুলের কাছে ফিরে যায়।
২০১২ সালে এশিয়া কাপে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে নাজমুল প্রথম স্পেল ৫-১-২০-৩ যা বাংলাদেশের জয়ে প্রধান ভূমিকা রাখে। এই ম্যাচটি ছিল নাজমুল ক্যারিয়ার শেষ ম্যাচ এর আগের ম্যাচ। এশিয়া কাপের পাকিস্তানের বিপক্ষে ফাইনাল ম্যাচটি নাজমুলের শেষ ম্যাচ; হ্যাঁ আনঅফিসিয়াল শেষ ম্যাচ।
অলিখিত শেষ ম্যাচের বোলিং ফিগার ৮-১-৩৬-১। শেষ ওভারে আমাদের ক্যাপ্টেন মুশফিক ভাই নাজমুলকে বল না দিয়ে শাহাদাৎকে দেন যার ফলাফল সবাই জানেন আর এইখানে কোন এক অজানা কারনে নাজমুলের ক্যারিয়ার শেষ। ওয়ানডে ক্রিকেটে ৩৮ ম্যাচ ৪৪ উইকেট শিকার করা নাজমুল রান খরচ করেছিলেন ৫.৪০ ইকোনমিকে। দারুণ প্রতিভাবান একজন বোলার হয়েও ক্যারিয়ার বড় করতে পারেননি নাজমুল।
কি কারনে ক্যারিয়ার বড় হয় নাই তার প্রশ্নের উত্তর অজানা। হয়ত ইনজুরি, নয়ত দুর্ভাগ্য , অন্যথায় অবহেলা! এই তিনটির যেকোনো একটি নাজমুলকে অভাগা বানিয়ে দিয়েছে। কেড়ে নিয়েছে অনেক স্বপ্ন। যেতে দেয়নি খুব বেশীদূর।
এই অভাগা ক্রিকেটার নাজমুলের আজ জন্মদিন। আজকের এই শুভ দিনে নাজমুলকে জানাই জন্মদিনের শুভেচ্ছা। শুভ জন্মদিন নাজমুল। শুভকামনা আগামীর দিন গুলোর জন্য।
Happy birthday to unsung hero of Bangladesh cricket.