ধ্রুবতারা? ঘোর অন্ধকারেও যার ব্যাটে আলোকচ্ছটা ছড়ায় তাকে তো ধ্রুবতারা বলতেই হয়। তারুণ্যে ভরপুর তরুণে নিজেকে ছাড়িয়ে যাওয়ার লড়াই। হতাশার মাঝে এক টুকরো আশার আলো ছড়িয়েছেন যিনি, তিনি তো ধ্রুবতারাই; ছন্নছাড়া বাংলার ধ্রুবতারা।
গল্পের শুরুটা ছিলো অনূর্ধ্ব-১৯ ক্রিকেটে। মাত্র ১৭ বছর বয়সেই অনবদ্য আফিফ। নিজের অভিষেক ম্যাচে পাকিস্তানের বিপক্ষে ৮০ রানের অনবদ্য এক ইনিংস খেলে জানান দিয়েছিলেন নিজেকে। অনূর্ধ্ব-১৯ এ নিজের সর্বশেষ পাঁচ ইনিংসে ৫০, ৬৩, ১৮, ৭১ ও ৬৩ রান করা আফিফ তো ধ্রুবতারা হতেই এসেছেন!
যেখানে শুরু সেখানেই শেষ; ২০১৯ এ আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অভিষেক। আট নাম্বারে নেমে ২৬ বলে ৫২ রানের ম্যাচ উইনিং ইনিংস, সেটিও আন্তর্জাতিক অঙ্গনে মাত্র দ্বিতীয় ম্যাচেই। ক্রিকেট পাড়ায় সেদিন আফিফকে অনেকেই ধ্রুবতারা ভাবতে শুরু করেছিলেন। সময়ের পরিবর্তনে আফিফ যেনো ধ্রুবতারা হবার মিশনেই এগিয়ে চলছে।
বয়স বাইশ পেরিয়েছে, বাইশ গজে আফিফ হয়ে উঠছেন ভরসার প্রতীক! যেখানে দলের বাকিরা ব্যর্থতার চাদরে নিজেদের মুড়িয়ে ফেলেছেন সেখানে আফিফ অনন্য, অসাধারণ। পরিস্থিতিকে সামলে খেলে চলছেন নিজের সহজাত খেলা। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অল্প সময়েই আফিফ চিনিয়েছে নিজেকে। অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে চাপকে চয় করে বিজয়ী উদযাপন কিংবা দলের বাকিদের ব্যর্থতার মাঝেও বাইশ গজে নিজেলে মেলে ধরার প্রয়াস, সবটাই দেখিয়েছেন আফিফ হোসেন ধ্রুব।
ওয়ানডে ক্রিকেটে ফিনিশার পজিশনে খেলানো হয় আফিফকে! কিন্তু পরিস্থিতি আফিফকে দায়িত্ব নিতে বাধ্য করে। আফগানিস্তানের বিপক্ষে ৯৩ রানের অপরাজিত ইনিংস কিংবা জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে অনবদ্য ৮৫ রান! আফিফ জানান দিতে চেয়েছেন তাকে ফিনিশার নয়, মিডল অর্ডারে খেলানো উচিত ম্যানেজম্যান্টদের।
আফিফকে কেনো প্রমোশন দেওয়া উচিত?
উত্তর খুঁজতে গেলে সামনে আসে ঘরোয়া ক্রিকেটে আফিফের দেখা মেলে টপ অর্ডার কিংবা মিডল অর্ডারে। পরিস্থিতিকে সামলে নিয়ে স্ট্রাইকরেট রোটেট করার দিকেও এগিয়ে আফিফ। অথচ আফিফকে নামানো হচ্ছে ৬/৭ নাম্বার পজিশনে। সোজা ভাবে বলতে গেলে আফিফকে ব্যবহার করতে ব্যর্থ ম্যানেজম্যান্ট।
আফিফকে মিডল অর্ডারে খেলানো উচিত হবে কি? উত্তরে আপনি একটু পিছনে ফিরে অনূর্ধ্ব-১৯ ক্রিটেকে ফিরলে দেখতে পারবেন পাঁচ নাম্বার পজিশনে ৮ ইনিংসের পাঁচটিতেই ফিফটির দেখা পেয়েছিলেন আফিফ, গড় ৪৫.২৮!
জাতীয় দলের হয়ে টি-২০ ক্রিকেটে চার নাম্বার পজিশনে আফিফের গড় ৩১.২০ ও পাঁচ নাম্বার পজিশনে ১৩১ স্ট্রাইকরেটের সাথে ২০ গড়! যেখানে নিয়মিত খেলা ৬ নাম্বার পজিশনে ১৮ ম্যাচে গড় ১৮ ও সাত নাম্বারে ৭ ম্যাচে গড় ৬.১৬! আফিফ যে ফিনিশার নয় সেটি কেনো বুঝছে না টিম ম্যানেজম্যান্ট?

ওয়ানডে ক্রিকেটে চার ও পাঁচ নাম্বারে খেলেছেন মোটেই ৩ ম্যাচ! এখানে ৬ নাম্বার পজিশনে ৩ ম্যাচ খেলা আফিফ রান করেছেন ১৩৯, স্ট্রাইকরেট ১০৩! এবং নিয়মিত পজিশন, অথাৎ সাত নাম্বারে ৫১ গড়ে রান ৩১১। স্ট্রাইকরেট একশোর নিচে। এবার আপনি বলতেই পারেন আফিফ তো এখানে সফল তাহলে উপরে কেন খেলাবেন? আপনি লক্ষ্য করলে দেখবেন সাত নাম্বার এমন কাউকেই খেলিয়ে থাকে দলগুলো যাদের থেকে ১৩০+ স্ট্রাইকরেটে রান চাইবে। কিন্তু আফিফ শেষ মূহুর্তে এসে দ্রুত রান তোলার পারদর্শীতা দেখাতে পারেননি এখনও। এমন একজন ইনফর্ম ব্যাটারকে ফিনিশিং রোলে খেলানো আসলেই উচিত?

(Photo by Munir Uz zaman / AFP) (Photo by MUNIR UZ ZAMAN/AFP via Getty Images)
আরেকটা বিষয় সামনে আসলে লক্ষ্য করা যায়, আফিফ চাপের মুখেও সাবলীল ব্যাটিং উপহার দিয়ে আসছে। আফিফের কয়েকটা ইনিংস সামনে আনলে যেটি লক্ষ্য করা যাবে সেটি হলো…
- বাংলাদেশ ৬০/৬ থেকে ১৪৮/৭ – আফিফ ২৬ বলে ৫২(জয়)
- বাংলাদেশ ৬৭/৫ থেকে ১২৩/৫ – আফিফ ৩১ বলে ৩৭(জয়)
- বাংলাদেশ ৪৬/৪ থেকে ১৩৪/৮ – আফিফ ৩৩ বলে ৪৯(হার) বাংলাদেশ ৪৫/৬ থেকে ২১৯/৬ – আফিফ ৯৩ (জয়)
- বাংলাদেশ ১৭৩/৫ থেকে ২৫৬/৯ – আফিফ ৮৫*(জয়)
এখানে লক্ষ্য করলে দেখা যায় আফিফ চাপের মুখেও নিজের সহজাত খেলা দেখেছেন। এছাড়াও বেশকিছু ক্যামিও রয়েছে যেগুলো দলের জয়ে বেশ অবদান রেখেছে। মিরপুরে স্পিন উইকেটে দলের বাকিরা ১০০ স্ট্রাইকরেটে রান তুলতে ব্যর্থ হলেও আফিফ সেখানেও ছিলেন সাবলীল। এরমাঝে রশীদ, মুজিবদের বিপক্ষে ৯৩ রানের অনবদ্য ইনিংস কিংবা ক্যারিয়ারের দ্বিতীয় ম্যাচেই ২৬ বলে ৫২ রানের ইনিংস খেলা আফিফকে নতুন করে ভাবা উচিত বিসিবির। যেখানে আফিফকে মিডলে প্রমোশন দিয়ে ফায়দা লুফে নেওয়ার সুযোগ তো পাচ্ছেই টিম ম্যানেজম্যান্ট। আফিফ কি এমন সুযোগ পাবে?