বাংলাদেশ ক্রিকেটের সমস্যাগুলো নিয়ে লিখব! ভাবলাম সমস্যা আর সমস্যা সমাধানের উপায় নিয়ে গুণীজনদের কিছু উক্তি দিয়ে শুরু করা যাক। গুগলকে ডেকে বললাম কিছু উক্তি খুঁজে দিতে। গুগল যা দিলো সেসব দেখে মনে হলো বাংলাদেশ ক্রিকেট এসব বাণী থেকেই হয়তো মোটিভেটেড। দু-চারটা উদাহারণ দেয়া যাক।
“সব সমস্যার প্রতিকারই হচ্ছে ধৈর্য্য”, এটা না কি হোয়াটলি বলেছেন। বিসিবি তো কাজকর্ম বাদ দিয়ে শুধু ধৈর্য্য ধরে সেই কবে থেকেই বসে আছে। কই, উন্নতি তো হয়না। মোটিভেশনাল বইপুস্তক লিখে বইয়ের পর্বত বানিয়ে ফেলা মার্কিন লেখক ডেল কার্নেগি না কি বলেছেন ভালোভাবে বাঁচতে চাইলে সমস্যাকে তুচ্ছজ্ঞান করতে হবে। বিসিবিও বহুকাল আগে থেকে একই কাজ করছে। হ্যাঁ, কথা ফলেছে, বাংলাদেশ ক্রিকেট ভালোভাবেই বেঁচে আছে। খাওয়া-দাওয়া, কাজ-কর্ম, ঘুম, লেখাপড়া বাদ দিয়ে মানুষ এখনো ক্রিকেট নিয়ে দিব্যি আছে। এসকল বাণীগুলো আসলেই তাদের করা কি না তা নিয়ে আমার ধারনা নেই। তবে যেই করুক না কেন বাংলাদেশ ক্রিকেট এসব মেনে নিয়েই এগোচ্ছে সেই বহুকাল আগে থেকেই। তাই সমস্যার কোনো সমাধান তো হচ্ছেই না, উলটো নতুন নতুন সমস্যা তৈরি হচ্ছে।
বাংলাদেশ ক্রিকেটের ঠিক কোন জায়গায় সমস্যা?
: উত্তর, দক্ষিণ, পূর্ব, পশ্চিম, ঈশান, বায়ু, অগ্নি, নৈঋৎ, উপর, নিচ সবদিকেই।
তাহলে কী নিয়ে লিখতে বসেছেন?
: এইতো, শুধু ডান, বাম, সামনে, পেছনে দেখে ক্ষুদ্র মস্তিষ্কে যতটুকু বুঝেছি ওইটুকুরই কিছুটা।
তাহলে দেখান দেখি কী কী আছে আপনার কাছে?
: ওকে, শুরু করলাম।
১. বোর্ড রাজনীতি
বাংলাদেশ ক্রিকেটের এই মূহুর্তে মূল যেই সমস্যা, সেটা হচ্ছে বোর্ড রাজনীতি। বোর্ডে কোনো প্রতিদ্বন্দ্বী আসছে না, আসতে পারছে না, আসতে দেয়া হচ্ছে না। এটা কীভাবে সম্ভব? এটা সম্ভব কাউন্সিলর নির্দিষ্ট করে দেয়ার মাধ্যমে! সেটাই বা কীভাবে সম্ভব? সেটা সম্ভব সেকেন্ড এবং থার্ড ডিভিশনে সুপার লিগ কারা খেলছে সেটা দেখে আর ফার্স্ট ডিভিশন এবং প্রিমিয়ার ডিভিশনে কারা খেলছে সেটা দেখে।
এইযে কোন ডিভিশনে কারা খেলবে, কারা সুপার লিগ খেলবে এসব তো আর নির্দিষ্ট করে দেয়া সম্ভব না। মাঠে খেলেই তো দল স্টেজ বাই স্টেজ যাবে আর সেখান থেকেই কাউন্সিলর নির্ধারিত হবে। কিন্তু এখানেই সমস্যা। মাঠে খেলার আগেই ঠিক হয়ে যায় কে জিতবে, কে হারবে। এটা দেশের ক্রিকেটের ওপেন সিকরেট। না, আমি এসব খুঁজে বের করিনি। নানা জায়গা থেকে পাওয়া নানা খবরে এতোটুকু সবারই জানা থাকার কথা। (১)
এইযে বোর্ড রাজনীতি করতে গিয়ে, নিজেদের প্রতিদ্বন্দ্বী আসার রাস্তা বন্ধ করতে গিয়ে মাঠের ক্রিকেট আর ক্রিকেট থাকছে না, সেটা বাংলাদেশ ক্রিকেটের অনেক বড় একটা সমস্যা। সেটা নিয়ে পরে বলছি। প্রতিদ্বন্দ্বী আসতে না পারায় হীরক রাজার দেশের রাজার সিংহাসনে রাজা তো বসেছেন, এমন কেউ তো নেই যে রাজার সাথে টক্কর দেবে। তাই কাজ করলেই কী আর না করলেই কী। গোল্লায় যাক ক্রিকেট, রাজা তো রাজা থাকছেনই। এটাই দেশের ক্রিকেটের প্রথম সমস্যা।
২. থার্ড ডিভিশন ক্রিকেট লিগ
থার্ড ডিভিশন ক্রিকেট লিগের বাছাই পর্বের দিকে চোখ দেয়া যাক। ২০১২ সালে যেখানে বাছাই পর্ব খেলেছে ৮৪টি দল, সেখানে ২০১৩ সালেই দলের সংখ্যা কমে হয় মাত্র ১৪টি। কারণ, এন্ট্রি ফি ৫ হাজার টাকা থেকে হয়ে গেছে ১ লাখ টাকা। পরের মৌসুমেই তা হয়ে গেছে ৫ লাখ। দলগুলো আসবে কোথা থেকে, ব্যাংক ডাকাতি করে এন্ট্রি ফি মিটিয়ে?
সমস্যা আরও আছে, এই ৫ লাখের সাথে দেয়া হয় আরও অনেক শর্ত। সব শর্ত পূরণ করে টাকা দিয়েও খেলতে পারেনা অনেক দল। আবার যারা খেলে তাদের অনেকেই মানে না শর্ত। এসবও মিলিয়ে নিতে পারবেন পোস্টের একেবারের শেষে থাকা সোর্সগুলোর প্রথম সোর্স থেকেই।
৩. সুজন-তাসনিমদের অভিশাপ
১১ এপ্রিল ২০১৭। ঢাকার সেকেন্ড ডিভিশন ক্রিকেট ম্যাচে লালমাটিয়া ক্রিকেট ক্লাবের সুজন মাহমুদ নামের একজন বোলার এক ওভারের প্রথম ৪ বলে ৯২ রান দেন আম্পায়ারদের পক্ষপাতিত্বের প্রতিবাদস্বরূপ। তাঁর আগের দিন ফিয়ার ফাইটার্স ক্লাবের বোলার তাসনিম ১ বলে দেন ৬৯ রান। দুজনেরই দাবি ছিলো তারা আম্পায়ারের পক্ষপাতিত্বের প্রতিবাদ করছিলো। বিসিবি এ ঘটনার বিচারও করেছিলো। ক্লাব দুটি আজীবন নিষিদ্ধ, সুজন-তাসনিম নিষিদ্ধ ১০ বছরের জন্য। আম্পায়াররা বেকসুল খালাস। সুজন-তাসনিম যদি সেদিন অভিশাপ দিয়ে থাকে তবে সেখান থেকে বাংলার ক্রিকেট বেরোবে কী করে? (২)
৪. উইকেট
বাংলাদেশের ডোমেস্টিক লিগের যেটুকু মোটামুটি ঠিকঠাক হয় সেখানেও সমস্যা। সেখানে কোনো ক্রিকেটার বছরের পর বছর ভালো করলেও সুযোগ পায় না জাতীয় দলে আসার। কারণ কী? নির্বাচকেরাই ব্যখ্যা দেন, “ঘরোয়া ক্রিকেটের উইকেট আপ টু দ্যা মার্ক না।“ (৩)
এখন প্রশ্ন হচ্ছে, জাতীয় দলে ফিরতে হলে কি নিজের বাবার জমিতে স্টেডিয়াম করে সেখানে নিজের খরচে আপ টু দ্যা মার্ক উইকেট তৈরি করে সেখানে খেলে নিজেকে প্রমাণ করে জাতীয় দলে আসতে হবে? ঘরোয়া ক্রিকেটের উইকেট যদি আপ টু দ্যা মার্ক না হয়, তবে ঘরোয়া ক্রিকেটটাই বা আছে কেন? পিকনিকের জন্য তো আরও অনেক ভালো স্পট আছে সারাদেশে, সেদিকগুলোতেই যেতে পারে।
প্রতিবারই লিগ শুরুর আগে বহু প্রতিশ্রুতি দেয়া হয় উইকেট নিয়ে, প্রতি বিপিএলের আগেও তাই। তবুও দিনশেষে সব কিছু আগের মতোই থেকে যায়। আর শের-এ-বাংলার উইকেটের রহস্যের সমাধান তো মিসির আলিও করতে পারবে না। সাথে গামিনী ডি সিলভার কপালে কয়েন রেখে সূর্যের দিকে তাকিয়ে এক পায়ে দাঁড়িয়ে থাকতে কেন বলা হচ্ছে না, সেটাও বোধগম্য না। এই লো-স্কোরিং উইকেটে খেলে বিশ্বকাপের আগে অস্ট্রেলিয়া আর নিউজিল্যান্ডকে হারিয়ে খুব আত্মবিশ্বাস পাওয়া দল বিশ্বকাপে নামিবিয়ার থেকেও খারাপ পারফর্ম করে ফিরে আসে। এরপরও যেমন উইকেট তেমনই থাকবে, হীরক রাজার ইচ্ছা।
৫. সিনিয়র ক্রিকেটারদের মোড়ল হওয়া থেকে দলের ভেতরে দল, সাথে অন্তর্কোন্দল
আমাদের মিডিয়া ক্রিকেট নিয়ে খুব সরব। ক্রিকেটের যেদিক নিয়ে সরব থাকা উচিত সেদিকে না থাকলেও কে কাকে চায়না, কে কাকে মানেনা এসব নিয়ে হরহামেশাই রিপোর্ট প্রকাশ করে আর প্রচুর ভিউও পায়। সেসব থেকে যতদূর জানতে পারবেন তার ৯৯% শতাংশও যদি গুজব হয় তবুও ১% অন্তত সত্য হবেই। কে জানে পুরোটাও সত্য হতে পারে।
তামিম না কি রিয়াদের কথায় অভিমান করে টি২০ থেকে সরে গেছে। (৪) মাশরাফির সাথে না কি সাকিবের সমস্যা। দলে থাকতে মাশরাফি-তামিম মিলে নাকি অনেক কিছুই করেছেন নিজেদের জন্য। এগুলো বেশিদিন আগের কথা না। এমনটা আসলেই? ফ্যাক্ট চেক করে দেখার সাধ্য আমার নেই। তবে ১১ জনের দলে পঞ্চপাণ্ডব নামে ৫ জনের আলাদা এক দল থাকলে একসময় সেই ৫ জনের মধ্যেও দল, উপদল হবে এটাই স্বাভাবিক। কারণ তারা আলাদা, তারা অটোচয়েস, তারা সিনিয়র, তারা মোড়ল। কে কাকে ছেড়ে কথা বলবে?
[স্টেজে মিরাজ ওঠলে সেখান থেকে তাকে মাশরাফির নামিয়ে দেয়া এবং শুধু সেই ৫ জনের থাকাটাই জানান দেয় পঞ্চপাণ্ডবের কলেবর। (৫ নং সোর্সের ভিডিয়ো)]
৬. সিনিয়র-জুনিয়র সংস্কৃতি
বাংলাদেশ ক্রিকেট টিমের সবথেকে বাজে সংস্কৃতিগুলোর একটা হচ্ছে সিনিয়র-জুনিয়র সংস্কৃতি। একই দলে খেলছে, একই সাথে খেলছে, সেখানে এই সিনিয়র-জুনিয়র সংস্কৃতিটা কেন? মুমিনুল যখন অধিনায়কত্ব করার সময় মাথায় রাখবে সাকিব-তামিমরা আমার সিনিয়র তখন স্বাভাবিকভাবেই মুমিনুল নিজের সিদ্ধান্ত তাদের উপর চাপাতে সংকোচ বোধ করবে। সাকিব-তামিমরা যখন ভাববে আমরা দলের সিনিয়র, তখন স্বাভাবিকভাবেই তারা ধরে নিবে মিরাজ, মুস্তাফিজরা তাদের হুকুম মতো চলবে। বাংলাদেশ দলের জুনিয়ররাই স্লিপে ফিল্ডিং করে।
এভাবে একটা দলের মাঠের ক্রিকেট থেকে ড্রেসিং রুম পর্যন্ত সবটাতেই হয়তো সিনিয়র-জুনিয়রের খুব ভালো একটা তৈলাক্ত সম্পর্ক তৈরি হচ্ছে কিংবা মনের মধ্যে চাপা ক্ষোভ জন্মাচ্ছে, তবে ক্ষতিটা হচ্ছে মাঠের ক্রিকেটের। মিডিয়ার তৈরি পঞ্চপাণ্ডব টার্মটা এই বাজে প্র্যাকটিসকে এখনো টিকিয়ে রাখছে। দলের ভালো চাইলে এখান থেকে বের হওয়া ছাড়া উপায় নাই।
৭. জবাবদিহিতার অভাব
কে আসলে কার কাছে জবাবদিহি করবে? প্রায় প্রত্যেকেই যখন নিজের দায়িত্বে ব্যর্থ তখন কাজের জবাব চাবে কে? চাওয়ার যখন কেউই নেই, তখন সাংবাদিকেরা প্রশ্ন করলে কেউ নিজেদের ওমানের সাথে তুলনা করে, দর্শকরা প্রশ্ন তুললে কেউ আয়নায় মুখ দেখতে বলে কেউ বা আবার পেইন কিলার নিয়ে খেলে বুঝাতে চায় আমরা সকল প্রশ্নের ঊর্ধ্বে। নির্বাচক প্যানেল নিয়ে প্রশ্ন ওঠলে কেউ কেউ আবার অস্ট্রেলিয়া দেখায়। বাইরের জনগণের কাছে তারা জবাবদিহি করতে বাধ্য না, তবে ভেতরে আদৌ হচ্ছে তো?
৮. প্রচুর টাকা, তবে টাকার কোনো সঠিক ব্যবহার না থাকা
২০২১ সালের সেপ্টেম্বরে বিসিবি প্রেসিডেন্ট নাজমুল হাসান পাপন জানিয়েছিলেন বিসিবির এফডিআর ৯০০ কোটি টাকার (৬), প্রচুর টাকা। কিন্তু এই টাকার কোনো যথাযথ ব্যবহার নেই। বিপিএল ভালোভাবে করতে পারে না, উইকেটের পেছনে টাকা ঢেলে সেটাকেও স্পোর্টিং উইকেট করতে পারে না। অ্যাকাডেমি তৈরি, ঠিকভাবে চালানো সেসব তো বহু দূরের কথা। এতো টাকা থাকার পরও লেগ স্পিনার খুঁজে বের করার কিংবা তৈরি করার কোনো পরিকল্পনা বিসিবির মাঝে দেখিনি। এতো টাকা থাকার পরও নিউজিল্যান্ড সফরে রেগুলার উড়োজাহাজে উড়ে গিয়ে পড়তে হয়েছে বাড়তি কোয়ারিন্টিনের খপ্পরে। এতো টাকা থাকার পরও বিশ্বচ্যাম্পিয়ন দলকে রাখা হয় হোটেলের বদলে ভাড়া ফ্ল্যাটে (৭) । প্রশ্ন করতেই পারেন, “বিসিবি তুমি কেন এতোই কৃপণা?”
৯. এদেশের ক্রীড়া সাংবাদিকেরা
এদেশের মানুষ খায় ক্রিকেট! ক্রীড়া সাংবাদিকেরাও খাওয়ান ভালোভাবে। যেকোনো ভাইরাল টপিক, যেকোনো কন্ট্রোভার্সি, যেকোনো খোঁচাখোঁচির সংবাদ, নিজেরা খুঁচিয়ে ক্রিকেটার কিংবা বিসিবির কোনো কর্মকর্তাদের থেকে কন্ট্রোভার্সিয়াল কিছু বের করা, সোজা নিউজের হেডলাইন বাঁকা করে দেয়া যেন তাদের নিত্যদিনের অভ্যাস। অধিকাংশ মানুষ যা খাবে, তারা তাই দেবে। কয়েকটা হেডলাইন, কয়েকটা কথার পোস্টমর্টেম করে দেখা যাক।
ক) প্রত্যেকের হৃদয়ে ধ্বনিত হয় ম্যাশ। – একাত্তর (৮)
এদেশে এখন খোঁজ নিলে মাশরাফি ফ্যান পাওয়া যাবে অনেক। তবে একটা বিশাল অংশ মাশরাফি হেটার। হেটারদের বাদ দিলেও অধিকাংশ ক্রিকেট সমর্থকদেরই পাওয়া যাবে যাদের হৃদয়ে এখন আর ম্যাশ ধ্বনিত হয় না। একাত্তর টিভির ওই সাংবাদিক ঠিক কাদেরকে ‘প্রত্যেক’ হিসেবে গণনা করলেন সেটা তিনিই ভালো জানেন।
খ) আমি নাম দেখে খেলি না, বল দেখে খেলি: জয় – অলরাউন্ডার (৯)
একজন ব্যাটার বল দেখে খেলবেন এটাই স্বাভাবিক। নাম দেখে তাঁর বোলিং সম্পর্কে ভালো ধারনা রাখবে, তবে খেলতে হবে বল দেখেই। অলরাউন্ডারের এই ৩ মিনিটের ভিডিয়োতে জয়ের দেয়া এই সাক্ষাৎকারে সবকিছু ঠিকঠাকই ছিলো, রিপোর্টও ঠিকঠাক। ঝামেলাটা হেডলাইনে। এমন শিরোনামের কারণে কী কী হতে পারে?
- প্রচুর ভিউ পাবে
- একটা বিশাল অংশ ভেতরের খবর পুরোটা না দেখেই শুধু হেডলাইন দেখে বলবে “ওরে বাপরে, দুই দিনের জয় বোল্টরে গুণে না”। সমর্থকদের মধ্যে শুরু হবে ট্রলের প্রতিযোগিতা।
দ্বিতীয়টা হয়েছেও, কিন্তু এমনটা কি কাম্য ছিলো? ডিফেন্ড করতে এসে যদি বলেন জয়ের বলা কথাটুকু সরাসরি কোট করে দিলে কী সমস্যা? আমি বলবো সরাসরিও কোট করেনি। জয় বলেছিলো “আমি অ্যা অ্যা আসলে নাম দেখে খেলিনা, আমি বল দেখে খেলার ট্রাই করছি।“ এর সাথে হেডলাইনের পার্থক্য আছেই, আপনি মানেন আর না মানেন।
গ) “পঞ্চপাণ্ডবের কোনো অর্জন নেই” – যমুনা টিভি (১০)
গত ২৬ ডিসেম্বর যমুনা টিভির ‘স্যাটারডে নাইট স্পোর্টস’ প্রোগ্রামে কোচ সালাউদ্দিন যা বলেন তাঁর সারমর্ম হলো, “পঞ্চপাণ্ডবের বড় কোনো অর্জন নেই। দেশকে তারা কোনো ট্রফি দিতে পারে নাই (আয়ারল্যান্ড-উইন্ডিজ ট্রাই নেশন্স ছাড়া)। এখন আমরা ভালো করতে চাইলে পঞ্চপাণ্ডবের মতো প্লেয়ার দিয়ে তাদের রিপ্লেস করলে হবে না, তাদের থেকে বেটার প্লেয়ার প্রয়োজন”। যমুনা টিভি ভিডিয়োর থাম্বনেইলে লিখে দিলো, “ক্রিকেট কোচ সালাউদ্দিনের মন্তব্য ‘পঞ্চপাণ্ডবের কোনো অর্জন নেই।‘”
ঘ) “জাতীয় দলে ফিরছেন আশরাফুল” – সময় টিভি (১১)
গত এপ্রিলে এই থাম্বনেইলেই সময় টিভি একটি নিউজ করেছিলো। ৮ মাস পেরিয়েছে, আর কিছু বলার নাই।
এতো গেলো শুধু হেডলাইন, থাম্বনেইল এসবের কথা। দেখালে এমন অনেক দেখানো যাবে। প্লেয়ারদের খুঁচিয়ে বিতর্কিত মন্তব্য করানোর একটা উদাহারণ দেয়া যাক। ১২ নম্বর সোর্সে উল্লেখ করা একাত্তর টিভির ভিডিয়োতে নিজেরাই দেখে নিন কীভাবে তামিম ইকবালকে খোঁচানো হচ্ছে একটা বিতর্কিত মন্তব্য বের করার জন্য, আমার কিছু বলার প্রয়োজন হবে না।
আর ক্রীড়া সাংবাদিকদের হিপোক্রেসি? বাংলাদেশ-নিউজিল্যান্ডের প্রথম টেস্টের প্রথম দিন ‘নট আউট নোমান’ নামক ইউটিউব চ্যানেলে একটি ভিডিও আসে যেখানে এবাদতকে দলে নেয়া কতটা বাজে সিদ্ধান্ত ছিলো তা প্রমাণ করতে ব্যস্ত ছিলেন চ্যানেলের মালিক। (১৩)
৫ জানুয়ারি ২০২২। হাসিমুখে ভিডিও শুরু করলেন, প্রচুর প্রশংসা করলেন, টাইটেল দিলেন ‘এই স্যালুটটা ইবাদতকেই’। (১৪) উদ্দেশ্য একটাই, কাস্টমার হারানো যাবে না, যখন যেদিকে হাওয়া, আমাকেও সেদিকেই বয়ে যেতে হবে।
এদেশের ক্রিকেটের উন্নতি চাইলে সাংবাদিকদের এসব কর্মকান্ড বন্ধ করতে হবে। কিন্তু এটা কি সত্যিই সম্ভব? একেবারেই না। তারা চাকরি করেন কিংবা নিজে থেকে ইউটিউব চ্যানেল চালান, তাদের প্রয়োজন টাকার। হাতে গোনা ২-৪ জনকে বাদ দিলে বাকি সবাই এমনই। যারা আবার নিরপেক্ষ থাকতে চান, নিউজের মতো নিউজ দিতে চান তাদের আবার আপনি আমি চিনিনা। তাদের কী করার আছে বলুন? তারা টাকা আয় করতে এসেছে।
এই অবস্থা থেকে উত্তোরণ চাইলে এমন সব নিউজকে বয়কট করতে হবে, চ্যানেলকে বয়কট করতে হবে। মিমও না হোক, প্রতিবাদও না। কেউ তাদের নামই আর না জানুক, তবেই মঙ্গল।
১০. বোর্ডের পেশাদারিত্বের অভাব
বোর্ডের পেশাদারিত্বের অভাব নিয়ে অনেক কিছু বলা যাবে অনায়াসে। এতো বললে পড়বে কে? কয়েকটি মাত্র পয়েন্ট উল্লেখ করা যাক।
ক) কোচ নিয়োগ
কোচ নিয়োগ দিতে গিয়ে বিসিবি যে প্রতিবার নাকানি চুবানি খায় তা হাথুরুসিংহের চলে যাওয়ার পর এক স্টিভ রোডসকে নিয়োগ দিতে গিয়েই বুঝিয়েছে বিসিবি। এতো টাকাওয়ালা এতো ধনি এক ক্রিকেট বোর্ড যদি কোচ খুঁজতে গিয়ে নাকানি-চুবানি খায় তবে তার পেশাদারিত্ব নিয়ে প্রশ্ন ওঠা স্বাভাবিক। সাথে এইচপি টিমের দায়িত্ব নিতে আসা রাসেল ডোমিঙ্গোকে জাতীয় দলের কোচ করে দেয়ার প্রসঙ্গও চলে আসবে। (১৫)
খ) কোচ ছাঁটাই
দলের ভালো আগে না কি বিসিবির লস? ডোমিঙ্গোকে ছাঁটাই করতে না পারার পেছনের কারণ সবার জানা। এতো টাকা থাকলেও লস দিয়ে দলের ভালো চাওয়া যাবে না, দল গোল্লায় যাক। টাকার জায়গায় টাকা থাকা চাই।
গ) গামিনী ডি সিলভা আর রায়ান কুক
এখানেও কিছু বলতে হবে?
ঘ) মিডিয়ায় বেশি কথা বলা থেকে বোর্ডের সাথে ক্রিকেটারদের দূরত্ব
একজন ক্রিকেটারের কিছু লাগবে, তিনি সেটা বোর্ডকে জানিয়েছেন, বোর্ড তার সিদ্ধান্ত ওই ক্রিকেটারকে জানানোর আগে জানিয়ে দেয় মিডিয়ায়। এক বোর্ড প্রেসিডেন্ট যেভাবে সহজ-সরলভাবে অকটপটে সব বলে দেন, দেখে বলতেই হয় ‘একেবারে মাসুম ব্যক্তি’। এতোটা মাসুম ব্যক্তিদের দিয়ে দেশের ক্রিকেটের উন্নতি? বারবার বোর্ডের কাছে চাইতে গিয়ে মিডিয়ার মাধ্যমে সিদ্ধান্ত জানার কারণে এখন ক্রিকেটাররাও মিডিয়ার মাধ্যমেই বোর্ডের কাছে চায়। বোর্ডের সাথে ক্রিকেটারদের এই দূরত্বটা কখনোই মঙ্গল বয়ে আনতে পারে না। প্রমাণ চাই? ‘সাকিব টেস্ট খেলতে চায় না’ নামক ঘটনার পানি তো অনেকদূর পর্যন্তই গড়িয়েছে (১৬)। মুশফিকের বেলায়ও এমনটা ঘটেছে নিকট অতীতেই।
ঙ) বিপিএল
বিপিএল আসলে যেন বিসিবির পেশাদারিত্বের অভাবটা স্পষ্ট হয়ে ওঠে। নিম্নমানের সবকিছু দিয়ে ভরে ওঠে বিপিএল। বিপিএল নিয়েও নতুন করে কিছু বলতে হবে না। শুধু এবারের বিপিএলের একটা মাত্র দিক নিয়ে বলেই শেষ করি। বিপিএলের আয়োজক বিসিবি, এই বিসিবির নিজেরই একটা দল আছে বিপিএলে। প্রতিবার হয়তো অন্য নামে থাকে, এবার সরাসরি। লাভলি বিপিএল। (১৭)
চ) অনলাইন জগত
অনলাইনে বিসিবির কী আছে? একটা ওয়েবসাইট আছে যেটা চালাতে হয় ধাক্কিয়ে ধাক্কিয়ে। ফেসবুক পেজের অ্যাডমিনরা ঘুমে থাকে, ইউটিউবেও নেই কোনো কার্যক্রম যেমনটা থাকার দরকার ছিলো। এদেশের সমর্থকরা যে পরিমাণে ক্রিকেট খায়, সেখানে বিসিবির নিজের বলতে যদি ভালো কিছু থাকতো সেটা দিয়ে বিসিবির টাকার পরিমাণ আরও অনেকগুণ বাড়তো।
১১. ইয়ান বিয়ান থেকে শুরু করে আপামর সমর্থক গোষ্ঠী
বাংলাদেশ ক্রিকেটের এতোদূর আসার পেছনের একটা বড় কারণ যেমন দেশের সমর্থকেরা, তেমনি এই খারাপ সময়ে দলের আরও খারাপ হওয়ার একটা রাস্তা করে দেয়ার দায়ও নিতে হবে তাদেরই। দুধের শিশু ফিটার খাওয়া শেষ করে ব্যাট হাতে নিয়ে দুটো শট খেললেই “দুধের শিশু অফিসিয়াল ফ্যান ক্লাব” নামের ফেসবুক পেজ, গ্রুপ তৈরি হয়ে যায়, আসে ইনভাইট, এরপর দুধের শিশু গাজা খেয়ে ধরা পরে, নিষিদ্ধ হয়, ফ্যানপেজের কার্যক্রমও শেষ। দুধের শিশুদের কথা বাদ দিলাম, পঞ্চপাণ্ডবদের ফ্যানদের কথায় আসা যাক।
সাকিবের ইচ্ছা হয়েছে, সাকিব টেস্ট খেলবে না। সাকিবের ইচ্ছা হয়েছে নিজেকে প্রথম পাণ্ডব বলার সাকিব বলেছে। এসবের কাউন্টার দিতে যাবেন? আপনার সামনে হাজির হয়ে যাবে বিশাল বিশাল সব তত্ত্ব, কাউন্টার দিতে গিয়ে আপনি হয়ে যাবেন ফাঁসির আসামি। তামিমকে নিয়ে কিছু বললেই চলে আসবে লর্ডসের সেঞ্চুরি থেকে এশিয়া কাপে ভাঙা হাত নিয়ে খেলার গল্প। মুশিকে নিয়ে বলতে গেলেই আপনার সামনে আকাশ থেকে এসে পড়বে বিশ্বকাপে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষের সেই ম্যাচটি হারিয়ে দেয়ার পর মুশফিকের পানি না খেয়ে কান্না করার ছবি। আপনি তাদের বিপক্ষে বলতে পারবেন না, বললেই ইয়ান-বিয়ানরা আপনাকে করে দেবে দেশদ্রোহী। তাদের গুরুদের মতোই বলে ওঠবে “আপনি দেশের জন্য কী করেছেন?”
সাকিবিয়ান, তামিমিয়ান মেনে নিলাম। কারণ ‘দে হ্যাভ ডান ইট ফর ফোর্টিন ইয়ার্স’। মাঠের মধ্যে দর্শককে পেটানো, বাসার সামনে সিটি কর্পোরেশনের কর্মীকে পেটানো, ভারতের দেরাদুনের ড্রেসিং রুমে টিমমেট মেহেদি হাসান মিরাজকে পেটানো সাব্বিরকে নিয়ে বলতে গেলেও পড়ে যাবেন মহা বিপদে।
অন্ধ ইয়ান-বিয়ানদের কথা থেকে সরে আসা যাক। আপামর সমর্থক গোষ্ঠীও এদেশের ক্রিকেটের ক্ষতির জন্য দায়ী। ক্রিকেট থেকে তাদের মুখ ফিরিয়ে নিতে না পারাটা তাদের নিজেদের ক্যারিয়ারের জন্য যেমন ক্ষতিকর, তেমনি ক্ষতিকর দেশের ক্রিকেটের জন্যও। আপনি যদি ক্রিকেট থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়ে বিসিবিকে বুঝাতে পারতেন, ‘খেলার উন্নতি না হলে আমরা থাকবো না, আমরা না থাকলে ব্র্যান্ড ভ্যালু থাকবে না’ তবে কিছুটা আশা করা যেত যে বিসিবি সিরিয়াসলি ভাবতে বসবে বিষয়টা নিয়ে।
আপনার-আমার ক্রিকেট ক্ষুধা এতোটাই বেশি, যে আইপিএলে সাকিব কিংবা মুস্তাফিজের ছবি যেই পরিমাণে শেয়ার হয়, ভারতের নিজের ক্রিকেটারের এমন অনেক ছবি আছে যেখানে সেই পরিমাণ রিএক্টও পরে না অনেকক্ষেত্রে। সাকিব বা মুস্তাফিজের ছবি যে পরিমান রিএক্ট পায়, তাদের আগের পরের ১০ পোস্ট মিলিয়েও সেটা হয় না সেই একই পেজের। এমন সমর্থকদের মাথায় কাঠাল ভেঙে খাওয়াটা বড্ড বেশি স্বাভাবিক।
১২. তরুণদের মাঝে নিজেদের ছাড়িয়ে যাওয়ার মনোভাব না থাকা
বিসিবির অনেক দোষ আছে। তবে এতো দোষের মধ্যেও নাসির হোসেন কেন নষ্ট হয়ে গেলো? সৌম্য সরকারের কেন উন্নতি নেই? মোসাদ্দেক সৈকতরা কেন নিজেদের ছাড়িয়ে যেতে পারে না? এসবের উত্তরে বিসিবির দোষ দিতেই পারেন, তবে তাদের নিজের দোষ যে সবথেকে বেশি সেটাও মানতে হবে। বর্তমান দলে খেলতে থাকা এক তাসকিন ছাড়া কার মধ্যে আপনি নিজেকে ছাড়িয়ে যাওয়ার মনোভাব খুঁজে পাবেন? সাকিব, তামিম, মুশফিকরা এখনো যে পরিশ্রম করে লিটন, মুস্তাফিজরা কি সেই পরিমাণে করে? উত্তর আপনার কাছেই আছে।
১৩. অনিশ্চিত ভবিষ্যত থেকে মুশফিক হ্যাস ডান ইট ফর ১৪ ইয়ার্স
মাশরাফি বিন মর্তুজা দলে নেই, এখন তাঁর খাওয়া দাওয়ার রাস্তা কী? দল থেকে বাদ হওয়ার পরের বিপিএলেই দল পেতে হাপিত্যেশ অবস্থা ছিলো, বিজ্ঞাপনই বা কতগুলো করেছে? তবুও করেছে কিছু, কারণ দেশের ইতিহাসের অন্যতম সেরা অধিনায়ক তিনি। তবে সেটা দিয়েই জীবন চালাবে?
সাকিবের দিকে তাকান। সাকিব স্পষ্ট করেই বলে ‘আর কয়টা বছর খেলব? খেলা ছাড়ার পরের জীবিকার জন্য তো ভাবতে হবে।‘ মুশফিক, রিয়াদ, তামিমরা ক্রিকেট ছেড়ে দিলে এমন ইনকাম করতে পারবে? দেশের বাইরের ক্রিকেটাররা ক্রিকেট ছাড়ার পরও বহুদিক থেকে টাকা আয় করে, দেশের ক্রিকেটে সেটা অনিশ্চিত। তাহলে বুড়ো হয়ে গিয়েও কেন ক্রিকেট ছাড়বে একজন ক্রিকেটার? তাইতো ‘মুশফিক হ্যাস ডান ইট ফর ১৪ ইয়ার্স’-এর মতো কথাগুলো বের হয় সিনিয়র ক্রিকেটারদের মুখ থেকে। (১৮) তাইতো এদেশে এখন পর্যন্ত স্বেচ্ছায় কাউকে ‘বাতিল’ ট্যাগ পাওয়ার আগ পর্যন্ত অবসর নিতে দেখা যায় না। জায়গা ধরে রাখার এই অপচেষ্টা দেশের ক্রিকেটের জন্যই ক্ষতির।
১৪. পাইপলাইন
আমাদের দেশের ক্রিকেটের পাইপলাইন অনেক বেশি সমৃদ্ধ্ব। তাইতো লিটন খারাপ করলে সৌম্য দলে আসে, সৌম্য খারাপ করলে আবার লিটন। পাইপলাইন প্লেয়ার পাবেনই বা কোথা থেকে? ওইযে থার্ড ডিভিশন ক্রিকেটে ক্লাবগুলোই আসতে পারছে না। ক্লাব আসতে না পারলে প্লেয়ার কি উড়ে উড়ে আসবে? গত ৫ বছরে দেশের ক্রিকেটে কতজন নতুন ক্রিকেটার এসেছে? উত্তর খুঁজে দেখেন তো কী পান!
১৫. প্রোপার ম্যাচ অ্যানালাইসিস এবং গেম প্ল্যানের অভাব
আমাদের দলে কি আদৌ কোনো কিছু নিয়ে অ্যানালাইসিস হয়? মনে তো হয় না। প্রতিপক্ষ নিয়ে অ্যানালাইসিস পরের কথা, নিজ দলের প্লেয়ারদের ভুল খুঁজে বের করার চেষ্টাও হয় না? যদি হয় তবে সৌম্যর অভিষেকের পর থেকে আজ পর্যন্ত কেন তার ফুটওয়ার্কের কোনো উন্নতি নাই।
আমাদের দেশের কোচদের, ক্যাপ্টেনদের কি গ্যামপ্ল্যান বলতে কিছু থাকে? হ্যাঁ, থাকে। শুধু ‘প্ল্যান আব্রা-কা-ডাব্রা’। প্ল্যান এ, প্ল্যান বি, প্ল্যান সি বলতে কিছুই থাকে না।
সমস্যা সমাধানের পথ
সমস্যা নিয়ে বলতে গেলে এমন বহু মুখ্য সমস্যা নিয়ে বলা যাবে। শের-এ-বাংলাকেন্দ্রিক ক্রিকেট হওয়া, মাশরাফির মতো দলের বাইরের লোকদের দলের ভেতর নিয়ে নেতিবাচক মন্তব্য করার মতো আরও অনেক কারণ আছে। এতো কারণ লিখে শেষ করা মুশকিল। তাই কারণ আপাতত এখানেই শেষ। সমাধানের অল্প কয়েকটি উপায় বলার চেষ্টা করি।
১. নিজেদের স্বার্থের ঊর্ধ্বে গিয়ে বোর্ডে যোগ্য প্রতিদ্বন্দ্বীদের আসতে দিতে হবে। ক্রিকেটের ভালোর জন্য ভাবেন এমন লোকদের বিসিবির বিভিন্ন পদে বসতে দিতে হবে।
২. টানা ব্যর্থতার পর হঠাৎ পাওয়া একটা জয় নিয়ে অনেক বেশি উচ্ছ্বাস না করে, সেই জয়ের পেছনে কীভাবে আমরা ভূমিকা রেখেছি সেসব না খুঁজে তেমন জয় যেন নিয়মিত আসে, সেই চিন্তা করতে হবে।
৩. থার্ড ডিভিশন ক্রিকেট লিগকে আগের রূপ দিতে হবে। ক্লাবগুলোকে বাঁচিয়ে রাখতে হবে। ক্লাব বাঁচলেই প্লেয়ার তৈরি হবে, প্লেয়ার তৈরি হলেই পাইপলাইন পাবেন, অন্যথায় না।
৪. পক্ষপাতিত্বের বিপক্ষে জিরো টলারেন্সে যতদিন যাওয়া হবে না, ততদিন উন্নতির কথাও চিন্তা করা যাবে না।
৫. ঢাকা বিকেন্দ্রকরণ করতে হবে, ঢাকার বাইরের মাঠের সুযোগ সুবিধা বাড়াতে হবে, সেখানেও নিয়মিত খেলা রাখতে হবে। আর সব স্টেডিয়ামের পিচ উন্নত করতে হবে। মরা পিচে খেলে তাজা ক্রিকেটার আশা করা বৃথা।
৬. দলের ভেতরে দল করতে দেয়া যাবে না। পঞ্চপাণ্ডব নামক দলটা ধীরে ধীরে শেষ হয়ে যাচ্ছে। নতুন করে অন্য কোনো দল ওঠতে দেয়া যাবে না। এখানে সমর্থকদেরই মূল দ্বায়িত্বটা পালন করতে হবে।
৭. সিনিয়র-জুনিয়র সংস্কৃতি থেকে বের হতে হবে। পারফর্ম করলেই কেবল দলে যায়গা পাবে এমন নীতিতে বিশ্বাসী হতে হবে। পারফর্ম করার জন্য ঘরোয়া ক্রিকেটের মান বাড়াতে হবে। দলে যখন খেলছে তখন বড়জোড় অভিজ্ঞ-তরুণ টার্ম দুটি ব্যবহার করা যায়, সিনিয়র-জুনিয়র না।
৮. প্রত্যেকের কাজের জবাবদিহি করতে হবে। নির্বাচক প্যানেলের প্রত্যেককে কোনো প্লেয়ার নেয়ার এবং বাদ দেয়ার পেছনের মূল কারণ ব্যাখ্যা করে দিতে হবে দল ঘোষণার সময়।
৯. প্রতিপক্ষকে নিয়ে প্রোপার অ্যানালাইসিস করতে হবে। কার কোথায় দুর্বলতা তা খুঁজে বের করতে হবে, কার শক্তিমত্তার জায়গা কোনটা সেটাও খুঁজে বের করে তা অ্যাভয়েড করতে হবে।
১০. গেম প্ল্যান থাকতে হবে। বাংলাদেশের গেম প্ল্যান হিসেবে স্বীকৃত ‘অমুক হাতের ব্যাটার ব্যাটিংয়ে থাকলে, তমুক ক্যাটাগরির বোলারকে আনা যাবে না”, “লেফট-রাইট কম্বিনিশনের জন্য ব্যাটিং অর্ডার ছাড়খাড় করে দিতে হবে” থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। অন্যান্য দলের গ্যাম প্ল্যান কেমন হয় তা নিয়ে অ্যানালাইস করতে হবে। সাকিব, মুস্তাফিজরা আইপিএলে গেলে তাদের গ্যামপ্ল্যান কেমন থাকে তা নিয়ে ভাবতে হবে।
১১. ক্রীড়া সাংবাদিকদের একটা বিশাল অংশকে বয়কট করতে হবে। এই দায়িত্ব সমর্থকদের। মাঝে মধ্যে পুরো ক্রিকেট থেকেই মুখ ফিরিয়ে নিতে হবে, নিতেই হবে।
১২. মিডিয়ার সামনে বিসিবির কোনো কর্মকর্তা কিংবা কোনো ক্রিকেটারের বেফাঁস মন্তব্য করা যাবে না। বোর্ডের সাথে ক্রিকেটারদের দূরত্ব কমাতে হবে।
১৩. বিপিএল নিয়ে সিরিয়াসলি সিরিয়াস হতে হবে।
১৪. তরুণদের মাঝে নিজেদের উন্নতির ক্ষুধা জাগ্রত করতে হবে।
এমন আরও অনেক সমাধানের উপায় নিয়েও বলা যাবে। তবে বিসিবির কেউ তো আর এই লেখা পড়বে না, এতো বাড়িয়ে কী লাভ। দেশের ক্রিকেটের সমস্যা আছে, আপাতত থাকছেই। নিকট ভবিষ্যতে এসব এড়ানোর কোনো সম্ভাবনা নাই। এখানে থাকা কোনো কথাই আমার না, সোর্স গুলো দিয়ে দিচ্ছি, দেখে দিয়েন। বিদায়!
তথ্যসূত্র:
১. https://youtu.be/gchGl9U6m2w
২. https://www.bbc.com/bengali/news-39780224
৩. https://tinyurl.com/42ufezwy
৪. https://youtu.be/ePkjOPxvXcY
৫. https://youtu.be/rqzY923TWe8
৬. https://bangla.bdnews24.com/cricket/article1935821.bdnews
৭. https://youtu.be/D3c_IN5uTSg
৮. https://www.facebook.com/khelajog.ekattorsports/videos/608544063773336
৯. https://youtu.be/-frAPUSHzeU
১০. https://youtu.be/I7fofNJO8Pc
১১. https://youtu.be/emgWqsSfSEE
১২. https://fb.watch/amCTCeUJ_T/
১৩. https://youtu.be/-t_dYYBU5pI
১৪. https://youtu.be/YifwAIN4jIs
১৫. https://roar.media/bangla/main/sports/how-much-russell-domingo-wants-to-give-bangladesh-team
১৬. https://dbcnews.tv/news/15b5333412989b