কঠোর পরিশ্রম, অক্লান্ত সাধনা; প্রতিনিয়ত নিজেকে ছাড়িয়ে যাওয়ার লড়াই। খেলার মাঠে আরেকটু ভাল করার জন্য ট্রেনিংয়ে আরও জোড় দেওয়া, প্রতি মুহূর্তেই বিগত দিনগুলোর চেয়ে আরেকটু বেশি মনোযোগী! অবিশ্বাস্য শৃঙ্খলা, রক্ত জল করা খাটুনি, আর বিন্দু বিন্দু ঘামেই তৈরি ইনজুরি জর্জর একজন কিংবদন্তীর! তিনি নড়াইল এক্সপ্রেস, কিংবা মাশরাফি বিন মুর্তজা। অনেকের কাছে কৌশিক নামে পরিচিত।
কৌশিক; চিত্রা নদীর স্রোতধারার বিপরীতে বয়ে চলা এক দুরন্ত কিশোরের নাম। এই নামটি এখন কোটি তরুণের এগিয়ে যাওয়ার অনুপ্রেরণা। বাড়ন্ত বয়সে ব্যাটিং তাণ্ডব চালানো সেই দুরন্ত কৌশিক আজকের নড়াইল এক্সপ্রেস।
বাবার চোখকে ফাঁকি দিয়ে ফুটবল অথবা ব্যাডমিন্টন খেলা, বন্ধুদের সাথে হৈ-হুল্লোড় করে সময় কাটানো; আবার কখনোবা চিত্রার পাড়ে বসে রাতভর গল্পগুজব করে সময় কাটানো ছেলেটির হঠাৎ প্রেম জাগে ক্রিকেটের প্রতি। শুরুর কৌশিক কিংবা শেষের মাশরাফির হয়ে উঠার গল্পে রয়েছে নানান চড়াই উৎরাই; পেরিয়েছেন বাধা-বিপত্তি। দিনশেষে তিনি সফল, তিনি কোটি ভক্তের মধ্যমণি। আজকের গল্পে জানবো একজন মাশরাফির জানা-অজানা নানান ঘটনা।
নড়াইলের আকাশে সুখের হাওয়া, চারদিকে আনন্দের সীমা নেই। নিমিষেই পুরো পাড়ায় হৈচৈ পড়ে গিয়েছে, বাতাসের মতো খবর ছড়িয়ে পড়েছে হামিদা মতুর্জার কোলে আগমন ঘটেছে এক ফুটফুটে শিশুর। বাবা গোলাম মতুর্জা আদর করে ছেলেটির নাম রেখেছিলেন মাশরাফি বিন মর্তুজা। ডাক নাম কৌশিক।
সময় কাটতে থাকে, ঘড়ির কাঁটা চলমান। চিত্রার বহমান স্রোতধারা বয়ে চলছে আপন মহিমায়। নড়াইলের ছোট্ট কৌশিক ততোদিনে ফুটবল কিংবা ব্যাডমিন্টন খেলেই সময় কাটিয়ে দেন। নানী আতিয়ার রহমানের সংস্পর্শে কৌশিক হয়ে ওঠে দুরন্ত। নানীর সংস্পর্শ আর মামাদের ভালোবাসায় বেড়ে ওঠা কৌশিক ছিলেন ব্যক্তিক্রমী। ধরাবাঁধা পড়াশোনার পরিবর্তে ফুটবল আর ব্যাডমিন্টন খেলতেই বেশি পছন্দ করতেন তিনি। সেই সাথে চিত্রা নদীতে সাঁতার কাটা ছিলো তার নিত্যদিনের ঘটনা। এইসব ঘটনা ছাপিয়ে জন্ম নিয়েছিলো নতুন এক ঘটনার, যেই ঘটনায় কৌশিকের প্রেম জমেছিলো ক্রিকেটের প্রতি। সেই থেকেই শুরু ক্রিকেটীয় চর্চা। সেই বাড়ন্ত বয়সেই বাইজ গজে চালিয়েছেন ব্যাটিং তাণ্ডব, আর বল হাতে তুলেছেন গতির ঝড়।
নড়াইল থেকে খুলনা, খুলনা থেকে ঢাকা; সবখানেই কৌশিক ছিলেন অকুতোভয় একজন, ছিলেন দুঃসাহসী। নিজের দিনে বিপক্ষের বাঘা বাঘা ক্রিকেটাররাও দিশেহারা হয়েছিলেন একজন মাশরাফির গতির সামনে কিংবা মারমুখী ব্যাটিংয়ে। অবশ্য, এই মাশরাফি অনেক আগেই চিনিয়াছিলেন নিজেকে। নড়াইলে খ্যাপ খেলতে যাওয়া ছিলো তার নিত্যদিনের ঘটনা। আর সেখানে একজন হার্ডহিটার ব্যাটসম্যান নামের পরিচিত ছিলেন তিনি। সময়ের সাথে সাথে ব্যাটসম্যান কৌশিক হয়ে উঠেছেন গতিময় বোলার। সেদিনের দুরন্ত কৌশিক আজ বাংলাদেশের ক্রিকেট ইতিহাসের অন্যতম সেরা ফাস্ট বোলার। স্বাধীন দেশের প্রথম গতিতারকা। দ্য নড়াইল এক্সপ্রেস।
আজকের নড়াইল এক্সপ্রেসের শুরুটা কেমন ছিলো? এইসবের উত্তর খুঁজতে গেলে সামনে আসে নড়াইলে দিনের পর দিন বাবা-মায়ের চোখ ফাঁকি দিয়ে খ্যাপ খেলতে যাওয়ার ঘটনাগুলো। যেই ঘটনায় কৌশিক ছিলেন ভয়ংকর এক ব্যাটসম্যান। কিন্তু, সেই ভয়ংকর রূপটা নিয়ে এগিয়ে যেতে পারেনি বেশীদূর। নড়াইলের বয়সভিত্তিক ক্রিকেটে হঠাৎ করেই বোলিংয়ে গতি তোলায় ব্যাটিংয়ে অমনোযোগী হয়ে বোলিংয়ে বেশী মনোযোগী ছিলেন ছোট্ট কৌশিক।
২০০১ সাল;
সেই সময় এশিয়া কাপকে সামনে রেখে বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়ামে অনূর্ধ্ব-১৯ দল গোছানোর কাজ চালিয়ে যাচ্ছিলেন নির্বাচকরা। মূলত তাদের লক্ষ্য ছিলো একজন পেস বোলার বের করে আনার। সেই মূহুর্তে নির্বাচকদের কাছে খবর আসে, নড়াইলের একজন খুব জোরে বল করতে পারে। যে-ই ভাবা সে-ই কাজ! তিন দিনের ক্যাম্প শেষে বাংলাদেশ অ-১৯ দলের স্কোয়াডে যুক্ত হয়েছিলো কৌশিকের নাম। সেই সাথে পূরণ হয়েছিলো লাল-সবুজের জার্সিতে মাঠ মাতানোর স্বপ্নটি।
সেবার অনূর্ধ্ব-১৯ দলের হয়ে ঘরের মাঠে গতির ঝড় তুলেছিলেন কৌশিক। পুরো টুনার্মেন্টে বল হাতে দ্রুতি ছড়িয়েছিলের একজন তরুণ পেসার। মূল ম্যাচে নামার আগে অধিনায়ক নাফীস ইকবাল কৌশিকের বোলিং দেখার আগ্রহ প্রকাশ করলে নেটে কৌশিককে বোলিং করতে আমন্ত্রণ জানায় নির্বাচকরা। সেদিন কৌশিকের বোলিংয়ের গতি দেখে নাফীস অবাক হয়ে গিয়েছিলেন। হয়তো, মনে মনে বলেছিলেন, তুমি আমার সেরা অস্ত্র!
খাঁটি সোনা চিনতে না কি ভুল হয়না স্বর্ণকারদের! ঠিক তেমনি একজন কৌশিককে চিনতে ভুল করেননি নির্বাচক কিংবা অধিনায়ক। ১৫-ই ফেব্রুয়ারি, ২০০১ সাল; এশিয়া কাপে নিজেদের প্রথম ম্যাচে নেপালের বিপক্ষে খেলতে নামা বাংলাদেশ দলে অভিষেক হয়ে যায় কৌশিকের। এশিয়া কাপের মতো বড় আসরে দলের পরীক্ষিত পেসার তালহা জুবায়েরের হাতে বল তুলে না দিয়ে অধিনায়ক নাফীস চকচকে বলটি তুলে দিয়েছিলো তরুণ কৈশিকের হাতে৷ বড় আসরে নিজের প্রথম ওভারেই সাফল্য পেয়েছিলেন কৌশিক, সাফল্য পেয়েছিল টিম বাংলাদেশ। সেদিন দুর্দান্ত এক বুলেট গতির বলে ব্যাটসম্যানকে বোকা বানিয়ে নিজের প্রথম শিকার করেছিলেন কৌশিক। সেটিই ছিলো লাল-সবুজের জার্সিতে কৌশিকের প্রথম শিকার, প্রথম উল্লাস।
নিজের প্রথম ম্যাচে ৯ ওভার হাত ঘুরিয়ে গতির ঝড় তুলে ২ ওভার মেইডেন আদায় করে নেওয়ার পাশাপাশি মাত্র ২৪ টান দিয়ে ৩ উইকেট শিকার করেছিলেন কৌশিক। সেই আসরে ২৮৮ টি বল করা কৌশিক শিকার করেছিলেন ৮ উইকেট, মেইডেন ছিলো ৮ ওভার। উইকেট সংখ্যা যেটাই হোক; গতির ঝড় তুলে ততক্ষণে ঠিকই মন জয় করে নিয়েছিলের নির্বাচকদের।
একজন বোলার কৌশিককে তো জানা হলো, এবার সেই আসরে ব্যাটিং কৌশিকের বিষয়ে জানতে গেলে একটা পরিসংখ্যান সামনে এসে যায়! যেই পরিসংখ্যানে কৌশিকের নামের পাশে যুক্ত ছিলো মাত্র ১৭ বলের মোকাবিলায় ৬০ রানের টনের্ডো ইনিংস। হয়তো, এই ইনিংসটি কৌশিককে মনে করিয়ে দিয়েছিলো নড়াইলে খ্যাপ খেলতে যাওয়ার সেই দিনগুলোর কথা; যেখানে কৌশিক ছিলেন হার্ডহিটার একজন ব্যাটসম্যান।
কৌশিকের জন্য ২০০১ সালটি ছিলো সোনার ফ্রেমে বাঁধিয়ে রাখার মতো। কেননা, ২০০১ সালে অনূর্ধ্ব-১৭ দলের এশিয়া কাপে খেলা, অনূর্ধ্ব-১৯ দলে জায়গা পাওয়া এবং মাত্র কয়েকমাসের ব্যবধানে সাদা পোশাকে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অভিষেক হয়েছিলো কৌশিকের। এ যেনো মেঘ না চাইতে বৃষ্টি পড়ার মতো ঘটনা! আর এই ঘটনা হয়তো একজন কৌশিক বলেই সম্ভব হয়েছে। এবার এই অসম্ভবকে সম্ভব করে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে পথচলার বিষয়গুলো নিয়ে কিছু বিষয় জানতে থাকি….
৮-ই নভেম্বর ২০০১ সাল;
গতির ঝড় তোলা কৌশিক ততোদিনে মন জয় করেছে ওয়েস্ট ইন্ডিজের সাবেক ফাস্ট বোলার অ্যান্ডি রবার্টসের। বাংলাদেশ ‘এ’ দলের হয়ে এক ম্যাচ খেলার সুযোগ হয় কৌশিকের। এরপর সবাইকে অবাক করে লিস্ট ‘এ’ ম্যাচ না খেলেই জাতীয় দলে সাদা পোশাকে অভিষেক হয়ে যায় কৌশিকের। জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে টেস্ট ক্যাপ মাথায় দেওয়া কৌশিক ‘গ্র্যান্ট ফ্লাওয়ার’ কে নিজের প্রথম শিকারে পরিণত করে উল্লাসে মেতে উঠেছিলেন ২২ গজে। এটি ছিলো সাদা পোশাক কৌশিকের প্রথম শিকার এবং এটিই ছিলো প্রথম শ্রেনীর ক্রিকেটে কৌশিকের প্রথম উইকেট। সেই সাথে নিজের নামটি লিখেছিলেন রেকর্ড বুকে। কেননা, লিস্ট এ ক্রিকেটে না খেলে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট খেলতে নেমে উইকেট শিকার করা ক্রিকেটারদের তালিকায় কৌশিক ছিলেন ৩১তম এবং ১৮৯৯ সালের পর তৃতীয় ক্রিকেটার!

এলেন, খেললেন, জয় করলেন; এই কথাটি কৌশিকের পাশে দিলে কেমন হবে? প্রশ্ন উঠতে পারে, শুরুর কৌশিক কেমন ছিলেন! উত্তরে সামনে চলে আসে অনেক ঘটনা। সামনে চলে আসে অনূর্ধ্ব-১৭ দলে এক সিরিজে ২৮৮ টি বল করার ঘটনা কিংবা ১৭ বলে ৬০ রানের টনের্ডো ইনিংস, ভেসে উঠে সিঙ্গাপুরের বিপক্ষে ৭ ওভার হাত ঘুরিয়ে মাত্র ৯ রান খরচ করে ২ উইকেট শিকার কিংবা অভিষেক টেস্টে ৪ উইকেট শিকারের ঘটনা। নড়াইলেই ছোট-বড় ঘটনাগুলো তুলে ধরতে গেলে কৌশিকের পাশে প্যারার প্রথম লাইনটি যুক্ত করতে কোনো সন্দেহ থাকার কথা নয়!
চিত্রা পাড়ের দুরন্ত কৌশিক কিংবা আজকের নড়াইল এক্সপ্রেসকে নিয়ে বলতে গেলে বলতে হয় অনেক কিছুই। স্রোতের বিপরীতে সাঁতার কেটে নদী পাড়ি দেওয়া ছেলেটি স্বল্প সময়ে নিজেকে প্রমাণ করেছেন। সুখ-দুঃখ, কিংবা চড়াই উৎরাই; সাফল্যের পাশাপাশি ইনজুরি নামক শব্দটি একজন কৌশিকের কাছ থেকে কেড়ে নিয়েছে অনেক কিছু। পাওয়া না-পাওয়ার গল্পের হিসেবের খাতায় যুক্ত করতে পারেনি বেশকিছু ‘প্রথম’ গল্প। তবে, এই কৌশিক দেশকে দিয়েছেন অনেক কিছু। হয়েছেন দেশসেরা পেসার, দেশসেরা কাপ্তান; ২২ গজের অকুতোভয় একজন যোদ্ধা। তিনি হয়েছেন কোটি তরুণের আইডল। তিনি আজকের মাশরাফি বিন মুর্তজা। এবার এই মানুষটির ক্রিকেট মাঠের সেরা পারফরম্যান্স গুলোতে একটু নজর দেওয়া যাক।
১. টেস্ট ক্রিকেট এবং কৌশিক:
প্রথম শ্রেণীর ক্রিকেটে না খেলেই ৮-ই নভেম্বর ২০০১ সালে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে সাদা পোশাকে অভিষেক হয় কৌশিকের। বৃষ্টিবিঘ্নিত সেই ম্যাচে কৌশিক তার গতির সাথে দারুণ লাইন-লেন্থে শিকার করেন ৪ উইকেট। ইনজুরি নামক শব্দটি কৌশিককে সাদা পোশাকে বেশিদূর যেতে না দিলেও বাংলাদেশের হয়ে ২০০১-২০০৯ সাল পর্যন্ত ৩৬ টি ম্যাচ খেলার সুযোগ করে দিয়েছে। গ্র্যান্ট ফ্লাওয়ারকে দিয়ে শুরু চামিন্দা ভাসকে দিয়ে শেষ; এর মাঝে ৭৬ জন(মোট ৭৮) ব্যাটসম্যানকে নিজের শিকারে পরিণত করা কৌশিক দেশের হয়ে ২২ গজে হাত ঘুরিয়েছেন ৫৯৯০ বার! যেখানে ২০২ টি মেইডেন আদায় করে নেন দ্য নড়াইল এক্সপ্রেস। এছাড়াও ব্যাট হাতে নিজেকে চিনিয়েছেন প্রয়োজনে। সর্বোচ্চ ৭৯ রানে করেছেন ৭৯৭ রান।

২. ওয়ানডে ক্রিকেট এবং কৌশিক:
সাদা পোশাকে লম্বা পথ পাড়ি দিতে না পারলেও ওয়ানডে ক্রিকেট লাল-সবুজের জার্সিতে কৌশিক পাড়ি দিয়েছেন লম্বা পথ। ২৩ নভেম্বর ২০০১ সালে ঘরের মাঠে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে রঙ্গিন পোশাকে অভিষেক হয় কৌশিকের। ২০০১ থেকে এখন পর্যন্ত ২২০ টি ম্যাচ খেলা মাশরাফি নামের পাশে যুক্ত করেছেন ১৭৮৭ রান এবং বল হাতে শিকার করেছেন ২৭০ রান। ১০৯২২ টি ডেলিভারি করা কৌশিক মেইডেন আদায় করে নেন ১২৩ টি। ইকোনমিক রেট ৪.৮৯। ওয়ানডে ক্রিকেটে মাশরাফির প্রথম শিকার এন্ডি ফ্লাওয়ার এবং শেষ শিকার তিনাশে কামুনহুকামুই।

৩. টি-২০ ক্রিকেট এবং কৌশিক:
ক্রিকেটের রাজকীয় ফরম্যাট টেস্ট এবং ৫০ ওভারের ম্যাচের মতো টি-২০ ক্রিকেটে কৌশিক খুব বেশী মেলে ধরতে পারেননি নিজেকে। ২৮ নভেম্বর ২০০৬ সালে ক্রিকেটের ছোট ফরম্যাটে অভিষেক হয় তার। অভিষেকের পর ৫৪ টি ম্যাচে অংশগ্রহণ করেছেন ২ নাম্বার জার্সিধারী এই ক্রিকেটার। বেন্ডন টেইলরকে অভিষিক্ত শিকার বানানো কৌশিকের শেষ শিকার ছিলো প্রসন্ন। এর মাঝে ৪০ জনকে নিজের শিকারে পরিণত করেন তিনি। এছাড়াও ব্যাট হাতে সর্বোচ্চ ৩৬ রানে সংগ্রহ করেন ৩৭৭ রান। এইসব পরিসংখ্যান দেখতে গিয়ে একটি বিষয় নজরে এলো, যেটি অবাক করে দেয় আমাকে। টি-২০ ক্রিকেটে কৌশিকের প্রথম এবং শেষ শিকারে পরিণত হওয়া দুইজনকেই বোল্ড আউট করেছেন দ্য নড়াইল এক্সপ্রেস।
…..
একজন কৌশিকের ক্রিকেট মাঠের পরিসংখ্যান দিয়ে তাকে বিবেচনা করা হবে হয়তো বোকামি। কারণ এই মানুষটি দেশকে দিয়েছেন অনেক কিছুই। এইসব নিয়ে আলোচনা করবো, তার আগে একটা বিষয়ে জানতে খুব ইচ্ছে করছে। আমরা সবাই একজন কৌশিককে দ্য লিডার বা দেশসেরা অধিনায়ক হিসেবেই চিনি। কিন্তু অধিনায়ক মাশরাফি কেমন ছিলেন? সেটি জানতে বড্ড ইচ্ছে হচ্ছে। আচ্ছা আসুন, এবার অধিনায়ক কৌশিকের বিষয়ে জানতে থাকি…
টেস্ট ক্রিকেট:
সাদা পোশাকে কৌশিক অধিনায়কত্ব করেছেন মাত্র ১ টি ম্যাচে। ২০০৯ সালে ফ্লয়েড রেইফারের বিপক্ষে টস জয়ী কৌশিক ম্যাচটিও জিতেছিলেন ৯৫ রানের বিশাল ব্যবধানে। যার মানে টেস্টে অধিনায়ক কৌশিক ১০০ তে ১০০% জয়লাভ করেন। অধিনায়ক হিসেবে কৌশিকের সংগ্রহ ৩৯ রান। বল হাতে ছিলেন উইকেট শূন্য।
ওয়ানডে ক্রিকেট:
সাদা পোশাকের পর ২০১০ সালে ওয়ানডে ক্রিকেটে প্রথমবারের মতো অধিনায়কের দায়িত্ব পান কৌশিক। অ্যান্ড্রু স্ট্রস থেকে শন উইলিয়ামস। এর মাঝে ২৯ জন অধিনায়কে সাথে টস করছেন কৌশিক। বাংলাদেশের জার্সিতে অধিনায়ক হিসেবে ৩১ জন অধিনায়কের বিপক্ষে টস করতে যাওয়া মাশরাফি জয়ের হাসি হেসেছেন ৫০ ম্যাচে। ২০১০-২০২০ সাল পর্যন্ত মোট ৮৮ টি ম্যাচ খেলা অধিনায়ক কৌশিকের বাক্সে ৫৭৮ রান এবং পকেটে পুড়েছেন ১০২ উইকেট।

টি-২০ ক্রিকেট:
১২-ই ফেব্রুয়ারি ২০১৪ সালে প্রথম বারের মতো টি-২০ ক্রিকেটে অধিনায়কত্বের দায়িত্ব পান কৌশিক। চান্দিমাল দিয়ে শুরু, থারাঙ্গা দিয়ে শেষ। এর মাঝে ১২ জন অধিনায়কের সাথে টস করতে দেখা গেছে কৌশিককে। এই ১৪ অধিনায়কের বিপক্ষে ২৮ ম্যাচ খেলা কৌশিক জয়ের হাসি হেসেছেন ১১ বার, বিপরীতে হেরেছেন ১৬ বার, একটি ম্যাচ বৃষ্টির কারণে পরিত্যক্ত। অধিনায়ক হিসেবে টস জিতেছেন ৪৬.৪৩%. এই ২৮ ম্যাচে ১৩২ রানের পাশাপাশি উইকেট শিকার করেছেন ২০ টি।
উপরের পরিসংখ্যান গুলো বলে দেয় অধিনায়ক মাশরাফি কেমন ছিলেন! ক্রিকেটের ৩ ফরম্যাট মিলিয়ে অধিনায়ক কৌশিক খেলেছেন ১১৭ ম্যাচ। এই ১১৭ ম্যাচে ৩৫ জন অধিনায়কের সাথে টস করার সৌভাগ্য হয়েছে কৌশিকের। পরিসংখ্যানে যেমন সবাইকে মাপা যায়না ঠিক তেমনি মাশরাফি। অধিনায়ক মাশরাফি শুধু পারফর্ম দিয়ে নয়, বুদ্ধিদীপ্ত ক্যাপ্টেন্সি দিয়ে মন জয় করেছেন কোটি ভক্তের। তকমা পেয়েছেন দেশসেরা অধিনায়কের। সবকিছুর বিচারে মাশরাফি এদেশের সেরা ওয়ানডে অধিনায়ক; এটা মানতে কারো দ্বিধা থাকার কথা নয়!
…..
কারো কাছে মাশরাফি, কারো কাছে কৌশিক, কারো কাছে বস! আবার কারো কাছে আইডল বনে যাওয়া এই মানুষটি ক্রিকেট মাঠে তুলেছেন গতির ঝড়, কিংবা বুদ্ধিদীপ্ত বোলিং করে নজর কেড়েছেন কোটি ভক্তের। আবার কখনো ব্যাট হাতে চার-ছক্কার ফুলঝুরিতে দর্শকদের মাতিয়েছেন; দেশকে নিয়েছেন জয়ের বন্দরে। দিনশেষে একজন কৌশিকের সেরা পারফর্ম গুলো খুঁজে বের করতে গেলে কোনটা উপরে রাখতে হবে সেটা নিয়ে দ্বিধায় পড়ে যায় অনেকে। ঠিক তেমনটি আমার ক্ষেত্রেও। তবুও দিনশেষে দ্য নড়াইল এক্সপ্রেসের সেরা কিছু বোলিং এংব ব্যাটিংয়ের স্মৃতিগুলো তুলে ধরাট বৃথা চেষ্টা করলাম। আসুন দেখে নেওয়া যাক সেই স্মৃতিগুলো….
অভিষেক টেস্টের প্রথম ইনিংসে ৪ উইকেট শিকার করা কৌশিক টেস্টে ৫ উইকেট শিকার করতে পারেননি কখনো। ম্যাচে একবার পাঁচ উইকেট শিকার করলেও ১০ উইকেট শিকার করার সৌভাগ্য হয়নি তার। পরিসংখ্যান বলে সাদা পোশাকে কৌশিকের সেরা বোলিং ফিগার ৬০ রানে ৪ উইকেট। সেটিও ২০০৩ সালের ঘটনা। শক্তিশালী ইংল্যান্ডের বিপক্ষে বোলিংয়ে দেখা মিলেছিলো তরুণ কৌশিকের। যেই কৌশিক অনূর্ধ্ব-১৭ দলের হয়ে তুলেছিলেন গতির ঝড়। সেদিনের কৌশিক ইংল্যান্ডের বিপক্ষে বল হাতে মাত্র ৬০ রানে তুলে নিয়েছিলো ৪ উইকেট! যা তার টেস্ট ক্যারিয়ারের সেরা বোলিং ফিগার।
৩ ছক্কায় ৭৯ রান:
কিছু স্মৃতি ভোলা যায়না। কিছু স্মৃতি সাথে হৃদয়মাঝে; থাকে সোনার ফ্রেমে বাঁধানো। ঠিক তেমনি, কৌশিকের একটি ইনিংস মাঠে উপস্থিত দর্শক কিংবা টিভির পর্দার দেখা হাজারো ক্রিকেটপ্রেমী ভুলবেনা কোনোদিন! ভারতের বিপক্ষে ঐতিহাসিক টেস্ট ম্যাচে সেদিন কৌশিক হয়ে উঠেছিলেন ভয়ংকর! দ্রাবিড়, শচীন, গাঙ্গুলি, জহির খানদের নিয়ে গড়া একাদশটি সেদিন হাসতে পারেনি শেষ হাসি। শুধু তাকিয়ে থেকে দেখতে হয়েছিল কৌশিকের ব্যাটিং তান্ডব! সেদিন মাত্র ৯১ বলে ৭ চারের সাথে ৩ ছক্কায় কৌশিক খেলেছিলেন ম্যাচ বাঁচানো ৭৯ রানের ইনিংস। যেই ইনিংসটি ভারতের বিপক্ষে টেস্ট ড্র করতে রেখেছিল গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা। আর এই ইনিংসটিই ছিলো তার টেস্ট ক্যারিয়ারের সেরা ইনিংস।
প্রথম নায়ক কৌশিক:
শুরুতেই বলেছি অনেক প্রথমের সাক্ষী হয়ে আছেন কৌশিক। এই গল্পটিতেও প্রথম নায়ক তিনি। অবশ্য এটি
কোনো সিনেমার কাহিনী নয়, এটি ছিলে প্রথম বারের মতো ভারতকে আটকে রাখার ঘটনা। আর সেই দিনটি ছিলো টগবগে কৌশিকের। সময়টি ২০০৭ সাল; প্রতিপক্ষ ভারত, যেই দলের বিপক্ষে টেস্টে ড্র তো দূরের কথা, হারের ব্যবধান কমানোর বিষয়টি মাথার নিয়ে খেলতে খেলতে হতো টিম বাংলাদেশকে। সেখানে সেই দলকে আটকে দিয়েছিল একজন কৌশিক। বল হাতে ২ ইনিংসে ৫ উইকেটের সাথে ব্যাটে হাতে খেলেছিলেন ক্যারিয়ার সেরা ইনিংস। দিনশেষে সেই ম্যাচটি ড্র করে বাংলাদেশ। সেই সাথে সেটি ছিলো ভারতের বিপক্ষে প্রথম টেস্ট ড্রয়ের ম্যাচ। যেই ঐতিহাসিক ড্রয়ের প্রথম নায়ক ছিলেন দ্য লিডার!
কৌশিকের ছক্কা ঝড়:
এটি নড়াইলে খ্যাপ খেলতে যাওয়া কোনো ম্যাচের ঘটনা নয়। এটি ছিলো ২০০৬ সালের ঘটনা। স্কটল্যান্ডের বিপক্ষে ঘরের মাঠে ৮ নাম্বারে ব্যাটিংয়ে নেমে স্কটিশ বোলারদের উপর তান্ডবলীলা চালানোর ঘটনা। সেদিন মাত্র ২৭ বলে ৫ ছক্কায় কৌশিক খেলেছিলেন ৫১ রানের অপরাজিত এক ইনিংস। জিতিয়েছেন বাংলাদেশকে; হয়েছিলেন ম্যাচ সেরা।
ইংল্যান্ড বধের নায়ক:
২০১৫ বিশ্বকাপে যাদের হারিয়ে প্রথমবারের মতো কোয়ার্টার ফাইনালে পৌঁছেছিলো বাংলাদেশ, সেই ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ঘরের মাঠে খেলতে নেমেছিল টিম বাংলাদেশ। ২০১৬ সালে সেই ঘটনাটি ভোলার মতো নয়! সিরিজের প্রথম ম্যাচে হারলেও দ্বিতীয় ম্যাচেই আগুনে কৌশিকের আগমন। দলের বাকি ব্যাটসম্যান যখন নিজেদের হারিয়ে খুঁজছিলেন ঠিক তখনি দলের ত্রাণকর্তা হয়ে হাজির হয়েছিলেন ক্যাপ্তান। সেদিন ব্যাট-বলে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে এক প্রকার সাইক্লোন চালিয়েছেন তিনি। খেলেছিলেন ২৯ বলে ৪৪ রানের ইনিংস, সেই সাথে বল হাতে শিকার করেছিলেন ২৯ রানে ৪ উইকেট। যা ছিলো অধিনায়ক হিসেবে কৌশিকের সেরা বোলিং ফিগার। সেই ম্যাচে কৌশিক হয়েছিলেন ম্যাচ সেরা।
১০-০-২৬-৬
দিনটি কৌশিকের জন্য ছিলো সোনার ফ্রেমে বাঁধিয়ে রাখার মতো। ছিলো সাফল্যের খাতায় নতুন পাতা যুক্তের দিন। সেদিন টগবগে যুবক রক্ত গরম করে কেনিয়ার বিপক্ষে রূঢ়মূর্তি ধারণ করেছিলেন ২২ গজে। সেদিন কেনিয়ার বিপক্ষে মাত্র ২৬ রানে শিকার করেছিলেন ৬ উইকেট। যা ওয়ানডে ক্রিকেট এখন পর্যন্ত তার ক্যারিয়ার সেরা বোলিং ফিগার।
এমন অনেক স্মৃতির মধ্যমণি হয়ে আছেন কৌশিক। একজন কৌশিকের সকল স্মৃতি তুলে ধরা প্রায় অসম্ভব! তবুও চেষ্টা করলাম। এবার একটু অন্য কিছুতে নজর দেওয়া যাক! অন্য কিছু বলতে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের একটি রেকর্ড মাশরাফিকে রেখেছে সবার উপরে। এবার সেই রেকর্ডটি দেখে নেওয়া যাক:
এই গল্পে সেরাদের সেরা দ্য নড়াইল এক্সপ্রেস!
ওয়ানডে ক্রিকেট ইতিহাসে ৯ নাম্বার পজিশন ব্যাটিং করেছেন অনেকেই। কিন্তু রানের দিক দিয়ে কৌশিক রয়েছে সবার উপরে। অভিষেকের পর থেকে এখন পর্যন্ত নয় নাম্বার পজিশনে ৬৯ ইনিংসে ব্যাটিং করা কৌশিক ১২.০৫ গড়ে করেছেন ৬৮৭ রান। যা ওয়ানডে ক্রিকেট ইতিহাসে নয় নাম্বার পজিশনে সবার উপরে জায়গা দিয়েছে। এই তালিকায় ব্রেট লি,ভেট্টোরির মতো খেলোয়াড়দের পিছনে ফেলেছেন ম্যাশ।
নয় নাম্বার পজিশনে সেরা পাঁচ ব্যাটসম্যান:
মাশরাফি- ৬৯ ম্যাচে ৬৮৭ রান।
ব্রেট লি- ৫৯ ম্যাচে ৬৩০ রান।
ভেট্টোরি- ৬৩ ম্যাচে ৫৮১ রান।
চামিন্দা ভাস- ৬৮ ম্যাচে ৫৫২ রান।
কাইল মিলস- ৪০ ম্যাচে ৫৪৫ রান।
…..
২০০১-২০২০; ১৯ বছরের ক্রিকেটীয় ক্যারিয়ারে কৌশিক পেড়িয়েছেন চড়াই উৎরাই। এই ১৯ বছরের কিছু বছর কৌশিকের জীবনে স্মরণীয় হয়ে থাকবে; থাকবে স্মৃতির প্রথম পাতায়। ১৯ বছরের কয়েকটি বছরকে ঘিরে কিছু আয়োজনে নজর দেওয়া যাক:
২০০৬ সাল: কৌশিকের ১৯ বছরের ক্যারিয়ারে এটিই হয়তো সেরা হয়ে থাকবে। ওয়ানডে ক্রিকেটে এই সিজনে ৪৯ উইকেট শিকার করা কৌশিক টেস্ট এবং ওয়ানডে মিলিয়ে ২৯ ম্যাচে ৩৪২ রানের পাশাপাশি বল হাতে নিয়েছিলেন ৫৩ উইকেট! বোলিংয়ে ৫৩ টি উইকেট তাকে নিয়েছে অনন্য উচ্চতায়।
২০০৯ সাল: এটি ছিলো কৌশিকেরর টেস্ট ক্যারিয়ারের শেষ বছর। এরপর আর সাদা পোশাকে দেখা যায়নি তাকে।এরপর ওয়ানডে এবং টি-২০ ক্রিকেটে খেলেছেন তিনি। বিদায়ী টেস্ট বছরে কৌশিক খেলেছিলেন নিজের টেস্ট ক্যারিয়ারের শেষ বছরটি খুব বেশী রাঙ্গাতে পারেননি তিনি্ এই বছর ৯ ম্যাচ খেলার সুযোগ হয় তার। এই সময়ে ৯ ম্যাচে ১১৫ রানের সাথে নিয়েছিলেন ১৬ উইকেট।

২০১৭: এই বছর কোটি ভক্তকে কাঁদিয়ে টি-২০ ক্রিকেটকে বিদায় জানিয়ে দেন কৌশিক। টি-২০ ক্রিকেটকে বিদায় বলে দেওয়ার বছরে ১৪ ম্যাচে ৭৫ রানের পাশাপাশি শিকার করেছিলেন ১৭ উইকেট।
২০২০ সাল: চলতি বছরে ছেড়েছেন অধিনায়কত্ব! যদিও আরো কিছুদিন লাল-সবুজের জার্সিতে খেলতে চান তিনি।চলতি বছরে ৩ ম্যাচে ১ রান করা নড়াইল এক্সপ্রেস শিকার করেন ৪ উইকেট। যা তাকে সমালোচনার বাতাসে ভাসায়।

এর মাঝে ১৯ বছরে কৌশিক দেশকে দিয়েছেন অনেক কিছু। স্মৃতি পাতায় যুক্ত করেছেন অসংখ্য গল্প। নিজেকে নিয়েছেন সেরাদের কাতারে। যেখানে তিনি অনন্য।
পরিসংখ্যান কিংবা সাফল্য; কৌশিককে জায়গা করে দিয়েছে কিংবদন্তীর কাতারে। কিন্তু দিনশেষে কৌশিক একটি জায়গায় অবাক করেছে সবাইকে। বিশ্বের বাঘা-বাঘা ক্রিকেটাররা যেখানে দুয়েকবার ইনজুরিতে পড়ে বিদায় জানিয়েছেন ক্রিকেটকে। সেখানে কৌশিক একেবারেই ভিন্ন চরিত্রের; এই গল্পে তিনি অকুতোভয়, লড়াকু যোদ্ধ কিংবা কোটি তরুণের আশার প্রতীক। তিনি সংগ্রামী!
ইচ্ছে, শক্তি, আত্মবিশ্বাস; এই তিনটি শব্দ একজন মানুষকে সফল করতে পারে। তেমনি সফল করেছে একজন কৌশিককে। বারবার ছুরির নিচে গিয়েও থেমে থাকেননি, ফিরটে এসেছেন নতুন শক্তিতে।
কৌশিকে অনেক হাসি-কান্না লুকিয়ে আছে। ঘরের মাঠে বিশ্বকাপ না খেলার কষ্টে কেঁদেছিলেন কৌশিক, কাঁদিয়েছিলেন হাজারো ভক্তদের। কিন্তু পিছুটান হননি; লড়াই করেছেন বুক চিতিয়ে, বল হাতে তুলেছেন ঝড়, নিজেকে নিয়েছেন সেরাদের কাতারে। নিয়েছেন রেকর্ড পাতায়। দিনশেষে তিনি বাঙ্গালীর গর্ব; বাঙ্গালীর অহংকার।