ক্রিকেট বিশ্বকাপ; ১৯৭৫ সাল থেকে অনেকটা নিয়মিতই ৪ বছর পর পর আয়োজিত হয়ে আসছে একদিনের ক্রিকেটের এই মহাযজ্ঞ। ব্যতিক্রম বলতে ১৯৮৭ এর পর ’৯১ তে না হয়ে ১৯৯২ তে আর ’৯৬ এর আসরের পর ১৯৯৯ তে আয়োজিত হয় বিশ্বকাপ। ২০০৭ থেকে চালু হয় বিশ ওভারের বিশ্ব আসর। ক্রিকেট খেলা প্রায় প্রত্যেক ক্রিকেটারেরই স্বপ্ন থাকে বিশ্বকাপে নিজের দেশের জার্সি পরে মাঠে নামার। তবে স্বপ্ন থাকলেই তো আর নামা যায় না, সবার সেই যোগ্যতা থাকে না। কিন্তু যদি বলি যোগ্যতা থাকা সত্বেও বিশ্বকাপ খেলতে পারেননি এমন ক্রিকেটারও আছে ক্রিকেট ইতিহাসে।
টেস্ট স্পেশালিষ্ট হিসেবে খেলায় অনেকেই খেলতে পারেননি বিশ্বকাপে। শিরোনামে থাকা তিনটি নামের প্রথম জন জাস্টিন ল্যাঙ্গার সে এই হিসেবেই নামতে পারেননি বিশ্বকাপে। কিন্তু পরের ২ জন ওডিআই দলে খেলেছেন ৮৫ এর উপরে ইনিংস! কিন্তু বিশ্বকাপ ম্যাচ?- একটিও না। ৩ জনের সম্পর্কেই খানিকটা জেনে নেয়া যাক আলাদা করে।
জাস্টিন ল্যাঙ্গার
বল টেম্পারিং কান্ড থেকে অস্ট্রেলিয়ার ঘুরে দাঁড়ানোতে যে কয়জন মানুষের অবদান একটু বেশিই, তাদের মধ্যে অন্যতম অস্ট্রেলিয়া দলের বর্তমান কোচ জাস্টিন ল্যাঙ্গার। অস্ট্রেলিয়ার ক্রিকেট ইতিহাসের সেরাদের সেরা একজন ইনি। স্টিভ ওয়াহ, রিকি পন্টিং, ম্যাথু হেইডেন, অ্যাডাম গিলক্রিস্টদের সময়ের ক্রিকেটার জাস্টিন ল্যাঙ্গার। নিজের পুরো টেস্ট ক্যারিয়ারে একই সতীর্থকে সাথে নিয়ে করা রানগুলোর সমষ্টি করলে জাস্টিন ল্যাঙ্গার আর ম্যাথু হেইডেন এর ৬০৮৭ রান ৪র্থ সর্বোচ্চ। সময়কাল ১৯৯৭ থেকে ২০০৭।
নিজের সময়ের সেরা হয়েও বিশ্বকাপ ক্রিকেটে দলের প্রতিনিধিত্ব করতে পারেননি তিনি একবারের জন্যও। অবশ্য তিনি অস্ট্রেলিয়া দলে খেলেছেন মূলত টেস্ট ক্রিকেটার হিসেবেই। একদিনের ক্রিকেটে খেলেছেনই ৮ ম্যাচ, শেষবার খেলেছেন ২৫ মে ১৯৯৭ এ। তাই তার বিশ্বকাপ না খেলা নিয়ে আক্ষেপটা একটু কমই থাকতে পারতো যদি না তার ক্যারিয়ার চলাকালীন অস্ট্রেলিয়া ৩ বার বিশ্বচ্যাম্পিয়ন না হতো।
৮ ম্যাচের ৭ ইনিংসে ব্যাট করে সেই সময়ে ৮৮.৮৮ স্ট্রাইক রেট আর ৩২ গড়ে এই ফরমেটে রান করেছিলেন ১৬০।
ভিভিএস লক্ষ্মণ
ভিভিএস লক্ষণের টেস্ট ক্যারিয়ার চলেছে ২০১২ সাল পর্যন্ত, তবে একদিনের ক্রিকেট ছেড়েছেন ২০০৬ সালেই। এর মাঝে তিনি দর্শক হিসেবে দেখেছেন ১৯৯৯ আর ২০০৩ বিশ্বকাপ। ভারতীয় ক্রিকেট ইতিহাসের অন্যতম সেরা এই ক্রিকেটার এই ২ বিশ্বকাপের কোনোটিতেই বিবেচিত হননি। ’৯৯ এর বিশ্বকাপে অবিবেচিত থাকার পেছনে অনভিজ্ঞতা কারণ হিসেবে থাকলেও ২০০১, ২০০২ সালের ভালো পারফরমেন্সের পরও জায়গা হয়নি ২০০৩ বিশ্বকাপ স্কোয়াডে। ২০০১ সালে লক্ষণ ১৫ ইনিংসে ৩৮.৬৪ গড়ে মোট ৫৪১ আর ২০০২ সালে ২১ ইনিংসে ৩০.৬৫ গড়ে মোট রান করেন ৬১৩। তার স্কোয়াডে না থাকার দুঃখটা বেড়ে যায় ২০০৩ বিশ্বকাপে ভারত চ্যাম্পিয়ন হলে।
জাস্টিন ল্যাঙ্গারের মতো লক্ষণ টেস্ট স্পেশালিষ্ট হিসেবে খেলেলনি শুধু। নিজের ক্যারিয়ারে ৮৬ টি ওডিআই ম্যাচ খেলে ৬ শতক আর ১০ অর্ধশতকে লক্ষণের মোট সংগ্রহ ছিলো ২৩৩৮ রান।
স্যার এলিস্টার কুক
আগের দুজনের বিশ্বকাপ ম্যাচ না খেলাতে যতটা অবাক হয়েছেন স্যার এলিস্টার কুকের না খেলাতে তার থেকে বেশি অবাক হতেই পারেন। ২০০৭ আর ২০১১ বিশ্বকাপ যখন চলে তখনও এলিস্টার কুক এই ফরমেটটা খেলেন। শুধু খেলেনই না, ২০১১ বিশ্বকাপের বছর ইংল্যান্ড দলকে ১৫ টি একদিনের ক্রিকেট ম্যাচে নেতৃত্বও দেন এলিস্টার কুক। অধিনায়ক হিসেবে শেষ ওডিআই ম্যাচ খেলেছেন ২০১৪ সালের ১৬ ডিসেম্বর। ২০১৫ বিশ্বকাপের ঠিক আগমুহূর্তে ৬৯ টি একদিনের ম্যাচে নেতৃত্ব দেয়া কুককে সরিয়ে মরগানকে অধিনায়ক করে ইংল্যান্ড বোর্ড। ২০১৪ এর ১৬ ডিসেম্বরই শেষ হয় তার ওডিআই ক্যারিয়ার।
কুক ৯২ টি একদিনের ম্যাচ খেলে ৫ শতক আর ১৯ অর্ধশতক করেন ৩৬.৪০ গড়ে। মোট রান ৩২০৪, স্ট্রাইক রেটটা ৭৭.১৩। ২০০৭ সালে ১৪ ম্যাচে তার মোট রান ছিলো ৪০৩ আর ২০১১ সালের ১৫ ম্যাচে ৬০০। ২০১১ তে তার গড় ছিলো ৪৬.১৫ আর স্ট্রাইক রেট ৯৩.১৬। টেস্ট ক্যারিয়ারে ১৬১ ম্যাচে মোট রান ১২,৪৭২।
এই ৩ জন ছাড়াও বিশ্বকাপ না খেলা গ্রেট প্লেয়ারদের তালিকায় আছেন ইংলিশ ম্যাথিউ হগার্ড, ব্লাক ক্যাপ ক্রিস মার্টিন, অজি স্টুয়ার্ট ম্যাকগিল, ভারতীয় মুরালি কার্তিকরাও। দলের সেরা খেলোয়ারদের একজন হয়েও বিশ্বকাপে খেলতে না পারার আক্ষেপ এই গ্রেটদের মনে গেঁথে থাকবে জীবনের শেষ পর্যন্ত এটাই স্বাভাবিক।