অস্ট্রেলিয়ান সামার- অস্ট্রেলিয়া-নিউজিল্যান্ড ‘ট্রানস-তাসমান ট্রফি’ টেস্ট সিরিজ। এশেজে আগুনে ফর্মে থাকা স্টিভেন স্মিথ কে ছাড়িয়ে পাদপ্রদীপের আলো পুরোটা নিজের করে নিয়েছেন মার্নাশ ল্যাবুশেইন- মার্নাশ ল্যাবুশেইন ওয়ার্ল্ড ক্রিকেটে নতুন এক বিস্ময়ের নাম! তিন ম্যাচের সেই সিরিজে ল্যাবুশেইনের রান সংখ্যা ৫৪৯. ছয় ইনিংস ব্যাট করে একটা ডাবল সহ দুই সেঞ্চুরি; ফিফটি প্লাস ইনিংস রয়েছে তিনটা। ব্যাটিং এভারেজ ৯১.৫০! একদিকে ওয়ার্নার, স্মিথ আর ল্যাবুশেইনের মারাত্মক ফর্ম। সেই ফর্মের আগুনেই কিনা হোয়াইটওয়াশে পুড়ে ছারখার কিউইরা! নিউজিল্যান্ড দলের একজন বাদে বাকি পুরো টিম ছিলো ছন্নছাড়া- তিনি নেইল ওয়েগনার! সিরিজে অজিদের ১৭ উইকেট নিয়ে দলের সেরা পারফর্মার ছিলেন তিনি। এক স্মিথকেই চারবার প্যাভিলিয়নের পথ দেখান তিনি- সেই সিরিজের কিউইদের প্রাপ্তি বলতে ওইটুকুই!
.
ওয়েগনার বল হাতে দৌঁড়ে আসেন, ছুঁড়েন একেকটা গোলার মতো বাউন্সার। এ-ই সেই বাউন্সার নয়- সোজা ব্যাটসম্যানের শরীর বরাবর তাঁক করে মারা বাউন্সার! ওয়েগনার বাউন্সার ছুঁড়েন; ম্যাথু ওয়েড ডাক করবেন নাকি ব্যাট চালাবেন বুঝে উঠার আগেই বল তারে কাঁধে এসে আঘাত করে। ওয়েগনার দৌঁড়ে ব্যাটসম্যান ওয়েডের কাছে এসে স্মিত হেসে আবার ফিরে যান! আরেকটা বাউন্সার ছুঁড়েন, বল এবার ওয়েডের কনুইয়ে এসে আঘাত হানে! ব্যাটসম্যান ওয়েডের হাপিত্যেশ শুরু হয়! স্মিথ এলেন- ওয়েগনার তাকেও স্বাগত জানালেন বাউন্সারে; বল তার শরীর ঘেঁষে কিপারের হাতে। স্মিথ শাফল করেন, ক্রিজ ছেড়ে এসে অফস্ট্যামে সরে আসেন। ওয়েগনারের তাতে কি! পরের বল আবারও বাউন্সার- এবার ঠিক স্মিথের শরীর বরাবর। স্মিথ কোনরকম শর্ট ফাইনলেগে থাকা ফিল্ডারের নাগালের বাহিরে রাখলেন। ওয়েগনার অনবরত বাউন্সারে স্মিথকে বেঁধে রাখেন স্কোর করা থেকে। একে একে ৩৮ টা বল খেলেও কোন রান করতে পারেননি স্মিথ! ওয়েগনারের একেকটা বাউন্সার যেনো মরণফাঁদ- যেকোনো মুহুর্তে আউট হবেন টেস্ট র্যাংকিংয়ের সেরা ব্যাটসম্যান স্মিথ।
স্মিথ-ওয়েগনারের ব্যাটলে গ্যালারি বেশ উত্তেজিত। টানা ৩৮ টা বল খেলার পর ৩৯ তম বলে এসে স্মিথ তার রানের খাতা খোলেন। গ্যালারি ভর্তি দর্শক স্মিথকে স্ট্যান্ডিং ওভেশান জানায়। আপনি ভাবুন, স্টিভেন স্মিথের মতো ব্যাটসম্যান টানা ৩৮ টা বল ডট খেলেছেন, পরের বলে সিঙ্গেল নেয়ার পর দর্শকদের সঙ্গে পুরো নিউজিল্যান্ডের প্লেয়াররাও তাকে অভিবাদন জানিয়েছে। অভিবাদন জানিয়েছে খোদ নেইল ওয়েগনারও! যেই ওয়েগনার ওই সিরিজে চারবার প্যাভিলিয়নের পথ দেখিয়েছেন তাকে। চারবারই ওয়েগনারের বাউন্সারে কাটা পড়েন স্মিথ!
——
২০১৯ এর ফেব্রুয়ারী-মার্চ
দুই ম্যাচ সিরিজের প্রথম টেস্ট ম্যাচে বাংলাদেশের প্রতিপক্ষ স্বাগতিক নিউজিল্যান্ড। তার ঠিক দু’বছর আগে সাকিব আল হাসানের ডাবল সেঞ্চুরির পরও ম্যাচ হারার রেকর্ড সঙ্গী টাইগারদের। টস জিতে বাংলাদেশ কে ব্যাটিংয়ের আমন্ত্রণ জানান কিউই দলপতি কেন উইলিয়ামসন। ট্রেন্ট বোল্টের গতি, টিম সাউদির সুইংয়ের সাথে নেইল ওয়েগনারের শরীর তাক করা সব বাউন্সারে বাংলাদেশের ব্যাটিং লাইন আপ ভেঙ্গেচুরে একাকার। একমাত্র তামিম ইকবালের ওয়ানডে মেজাজে সেঞ্চুরিতে বাংলাদেশ তাদের প্রথম ইনিংসে স্কোরবোর্ডে ২৩৪ রান তুলতে সক্ষম হয়। দলীয় প্রায় অর্ধেক রানই (১২৬) আসে তামিমের ব্যাট থেকে। জবাবে জিত রাবেল, টম লাথামের সেঞ্চুরি এবং উইলিয়ামসনের ডাবল সেঞ্চুরিতে কিউইরা যখন ৭১৫ রানে ইনিংস ডিক্লেয়ার করে ম্যাচ তখনই হেরে যায় বাংলাদেশ। বাংলাদেশ হেরে যাবে এটা হয়তো অনুমেয়-ই ছিল। কিন্তু ন্যুনতম ফাইটব্যাক ছাড়াই হেরে যাবে সেটা কেউই ভাবেনি! হয়েছেও তাই- বাংলাদেশ সেই ম্যাচ হেরে যায় ইনিংস ও ৫২ রানের বড় ব্যবধানে। কিন্তু হেরে যাবার পরেও কিছু কথা থেকে যায়। কিছু ফিরে পাওয়ার গল্প থেকে যায়- নিজের ক্যাপাবিলিটি আর কনফিডেন্স ফিরে পাবার গল্প- একজন সৌম্য সরকারের গল্প!
—–
বাংলাদেশ দল তাদের দ্বিতীয় ইনিংসে করে প্রথম ইনিংসের চেয়েও প্রায় দুইগুণ রান। দ্বিতীয় ইনিংসে ৪২৯ রানে থামে বাংলাদেশ দলের ইনিংস। মাহমুদউল্লাহ রিয়াদের সেঞ্চুরি (১৪৬), তামিম ইকবালের (৭৪) আর সৌম্য সরকারের (১৪৯)। সৌম্য সরকারের এই ইনিংসটা কে গুরুত্ব দেয়ার পেছনে অবশ্য কারণ রয়েছে।
নিউজিল্যান্ডে আগের সফরেও টেস্ট দলে ছিলেন তিনি। ইমরুলের চোটের সুযোগে ক্রাইস্টচার্চে ফিরে খেলেছিলেন ৮৬ রানের ইনিংস। সেটিই সেদিন পর্যন্ত টেস্টে তার সর্বোচ্চ। এবার সুযোগ মিলেছে সাকিবের চোটে। খেললেন প্রথম শ্রেণির ক্যারিয়ারেই সর্বোচ্চ ইনিংস। এই ইনিংসে ছিলো দৃষ্টিনন্দন সব ক্রিকেটীয় শট। বোল্ট, সাউদির সুইং যেমন সামলে খেলেছেন তেমনি ওয়েগনারের বাউন্সারেও ছিলেন সাবলীল। খেলেছেন পুল, হুক, পেরিস্কোপের মতো শট!
জ্বি ভাই, অস্ট্রেলিয়ায় এসে স্মিথ, ওয়ার্নার আর নতুন সেনসেশান ল্যাবুশেইন কে বাউন্সারে নাকানিচুবানি খাওয়ানো ওয়েগনারের বলেও সাবলীল ছিলেন আমাদের সৌম্য সরকার!
আমাদের বা’হাতি ব্যাটসম্যানদের মধ্যে তামিম সলিড আর স্টেডি থাকতে পছন্দ করেন। স্টান্স, ব্যাক লিফট নিয়ে নিখুঁত থাকতে চান, প্রসেসের বাইরে যান খুব সামান্যই; শাফল কখনও করেন না সাধারণত। তবে এই টেস্টে, মূলত নিল ওয়েগনারের শর্ট বল সামলাতে, বিশেষ করে রাউন্ড দা উইকেটে করা শর্ট বল খেলতে তামিম শাফল করে ভেতরে ঢুকে খেলেছেন। তাতে পুল-হুক করতে, বল ছাড়তে বা ‘ডাক’ করার জন্যও ভালো পজিশনে যেতে পেরেছেন। সৌম্যও শাফল করে সাফল্য পেয়েছেন!
ওয়েগনার তো একটি ফর্মূলাই মানে, শরীর তাক করে শর্ট বল। গতির সঙ্গে শরীর বরাবর ভয়ঙ্কর সব বাউন্সার। বল সুইং করছিল না বলে বোল্টও সেদিন একই পথ বেছে নিয়েছিলেন। ক্রমাগত শর্ট বল, বাঁহাতি ব্যাটসম্যানকে রাউন্ড দা উইকেটে শর্ট বল। সৌম্য বিস্ময়কর ভাবে ভালো সামলেছেন দুজনকেই। কাজটা কঠিন- ঝুঁকিরও। তবে তামিম প্রথম ইনিংসে করে দেখিয়েছেন- দ্বিতীয় ইনিংসেও। সৌম্য সেটিই অনুসরণ করেছেন সম্ভবত।
সেদিন সৌম্য কিছু ভেবেছেন, একটি দারুণ পরিকল্পনা করেছেন, সেটির প্রয়োগও করেছেন সফলভাবে, সাহস দেখিয়েছেন, বিশ্বাস রেখেছেন নিজের ব্যাটিংয়ে, এই সবকিছুই দারুণ ব্যাপার। সকালে আগ্রাসী খেলে, লাঞ্চের আগের আধ ঘণ্টায় যেভাবে সাবধানে খেললেন সেশন কাটানোর জন্য, আমার সবচেয়ে ভালো লেগেছে সেই অংশটুকু।
সৌম্যর ব্যাটিংয়ের বিশেষত্বই এটি, যেদিন নিজের মতো খেলতে থাকেন, বল যেন সম্মোহিতের মতো তার কথা শুনে! তার ঘরানার ব্যাটসম্যানদের জন্য মানসিকতা শক্ত থাকা বা রাখার বিকল্প নেই। চারপাশে ভ্রুকটিকে উপক্ষো করে খেলতে হবে। নিজেকে নিয়ে সংশয় করা যাবে না। সৌম্য সেদিন সংশয় ছাড়াই খেলেছেন, খেলেছেন ক্যারিয়ার সেরা ১৪৯ রান! যদিও তার এই রান দলের ইনিংস পরাজয় এড়াতে পারেনি। ওয়েগনারের বডি লাইন বরাবর বাউন্সার সামলাতে যেখানে স্মিথ, ওয়ার্নারের মতো ব্যাটসম্যানরা হাপিত্যেশ করেন সেখানে সৌম্যের কাছ থেকে এই ইনিংস আমাদের মতো দর্শকদের কাছে মহাকাব্যের মতোই সুন্দর!
——-
বিশ্বকাপ খেলতে যাওয়ার আগে আয়ারল্যান্ডে ত্রিদেশীয় সিরিজে অংশ নেয় বাংলাদেশ দল। স্বাগতিকরা ছাড়া বাকি দল ওয়েষ্টইন্ডিজ। ডাবলিনে চলছিল ত্রিদেশীয় সিরিজের ফাইনাল। ইনিংসের নবম ওভারে কেমার রোচকে মিড উইকেটের ওপর নিয়ে সোজা ব্যাটে তুলে মারলেন সৌম্য। সেদিন তিনি খেলেন ৬৬ রানের ইনিংস। সেই ৬৬ রানের ইনিংসটাতে আরো নয়টা চার আর দু’টি ছক্কা হাঁকিয়েছিলেন সৌম্য। কিন্তু, ওই একটা ছক্কাতেই বিশাল একটা বার্তা ছিল। বুঝিয়ে দেওয়ার একটা ব্যাপার ছিল। সৌম্য বোঝাতে চেয়েছিলেন, বিশ্বকাপে ঠিক এভাবেই ব্যাট করবেন। পাওয়ার প্লে তে তিনি করবেন ভয়ডরহীন ব্যাটিং। তিনি ব্যাটিংয়ের গতিটা সেট করে দিবেন একদম শুরুতেই। বাকিরা কেবল সেই গতিটা ধরে রাখবেন।
বিশ্বকাপের প্রথম ম্যাচ, সৌম্যের নিজেকে প্রমাণের পালা- বাংলাদেশ দলের দর্শকদের বহু পুরনো হিসেব চুকিয়ে দেয়ার পালা! দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে কেনিংটন ওভালে তিনি ইনিংসের শুরুতে যেটা করলেন, সেটা আচমকা কোনো পরিকল্পনা নয়। এমন একটা কিছুর ছক অনেকদিন ধরেই কষে আসছে বাংলাদেশ। বিশেষ করে লুঙ্গি এনগিদির করা ইনিংসের পঞ্চম ওভারটিতে দু’টি চার হাঁকিয়ে তিনি বুঝিয়ে দিয়েছেন, আর যাই হোক এই বাংলাদেশের বিপক্ষে শর্ট বলে কোনো কাজ হবে না।
বার্তাটা কেবল প্রতিপক্ষের জন্য নয়, ছিল ড্রেসিংরুমেও। আর সেটা হল, ‘নির্ভার থাকো, স্নায়ুচাপে ভোগার সময় এটা নয়। হয়তো আমরা টুর্নামেন্টের অন্যতম সেরা বোলিং আক্রমণের মোকাবেলা করছি, কিন্তু এই উইকেটে তেমন কোনো দৈত্য-দানব’ লুকিয়ে নেই।’ সৌম্য ৩০ বলে ৪২ রান করেন। বিশ্বকাপে আক্রমণাত্মক ওপেনারদের জন্য একটা ‘আদর্শ’ স্কোর বলা যায় এটাকে। হ্যাঁ, দ্বাদশ ওভারে হয়তো তিনি বোকার মত আউট হয়েছেন, কিন্তু ততক্ষনে বাংলাদেশ ৬.৬৩ রান রেটে ৭৫ রান তুলে ফেলেছে।
সেই মজবুত ভিতে দাঁড়িয়েই তো মুশফিকুর রহিম, সাকিব আল হাসান ১৪২ রানের জুটি গড়েছেন। শেষের দিকে মোসাদ্দেক হোসেন আর মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ রান তোলার গতি বাড়িয়ে ৩৩০-এ নিয়ে গেছেন বাংলাদেশকে।
অথচ, তার বছর খানেক আগেও বাংলাদেশের ওয়ানডে পরিকল্পনার অংশ ছিলেন না সৌম্য। এনামুল হক বিজয়কে ফিরিয়ে আনা হয়েছিল, তিনি নিজেকে মেলে ধরতে পারেননি। লিটন দাস, নাজমুল হোসেন শান্ত, ইমরুল কায়েস, এমনকি মেহেদী হাসান মিরাজকেও এই পজিশনে খেলানো হয়েছে। কোনোটাই খুব যুৎসই হয়নি। না তখন, না এখনও! তামিম ইকবালের ওয়ানডে ওপেনিং পার্টনারের অভাবে অপূর্ণই থেকে গেলো বাংলাদেশ দলের!
——
মাত্র এক ম্যাচ খেলার অভিজ্ঞতা নিয়ে খেলতে গিয়েছেন ২০১৫ সালের ওয়ানডে বিশ্বকাপ। অস্ট্রেলিয়া-নিউজিল্যান্ডের পেস-সুইংকে কাবু করেছিলেন, একের পর এক কাভার ড্রাইভে, কাটে মুগ্ধ করেছিলেন তাবৎ দুনিয়াকে। এক নতুন বাংলাদেশের ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসেডর-ই যেন হয়ে গিয়েছিলেন, যে বাংলাদেশ ‘ভয়ডরহীন ক্রিকেট’ খেলে।
বিশ্বকাপ ফিরে কাঁপিয়েছিলেন পাকিস্তান, ভারত, দক্ষিণ আফ্রিকাকে। তার ব্যাটেই তো লেখা হয়েছিলো দৈত্যবধের কাব্য, রচিত হয়েছিলো দেশের ক্রীড়াঙ্গনের সফলতম বছর। এরপর? হারিয়েছেন নিজের ফর্ম, দল থেকে বাদ পড়লেন, আবার ফিরে এলেন! নিজের প্রিয় ব্যাটিং পজিশন ছেড়ে ব্যাট করেছেন ১-৭ নাম্বার পজিশনেও।
—–
আশরাফুল পরবর্তী সময়ে বাংলাদেশের ক্রিকেটাঙ্গনে সবচেয়ে আলোচিত সমালোচিত নামটা বোধহয় এই সৌম্যই। অভিষেকের পর থেকে আজ পর্যন্ত সবসময় আলোচনায় ছিলেন তিনি। কখনো ভালো পারফরম্যান্স করে কখনো বা অফফর্মে থেকেও দলে চান্স পাওয়ায়। সাধারণ দর্শক হতে শুরু করে ক্রিকেট বোর্ড প্রেসিডেন্ট, তার খারাপ সময়ের দোলায় দুলেছেন বোধহয় সবাই। একজন ব্যাটসম্যান রান পাচ্ছেন না, তাকে বাদ দেয়াটাই নিয়ম। কিন্তু সাবেক কোচ চান্ডিকা হাতুরুসিংহে এই নিয়মের বিরুদ্ধচারণ করেছেন বহুদিন- রান না করেও অবলীলায় সুযোগ পেয়েছেন দলে।
তার জন্যে কোচকে জনতার শুলে চড়তে হয়েছে বেশ ক’বার। নির্বাচক প্যানেলে বেঁধেছে দ্বন্দ্ব। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে হয়েছে লেখালেখি, টেলিভিশনে হয়েছে আলোচনা, তার চেয়েও বেশি সমালোচনা। মাঝখানে গ্যাঁড়াকলে পড়েছেন সৌম্য। কখনো ওপেনিং, কখনো সাত নম্বরে নেমেছেন, রান আর পাননি। পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ায় দল থেকে বাদ পড়েছেন, কিছু না করেই দলে ফিরেছেন, আত্মবিশ্বাস হারিয়েছেন। খেলা দেখতে দেখতে ক্রিকেটবোদ্ধাদের কখনো বোধহয় এমনও মনে হয়েছে, ‘সৌম্য! ফুরিয়ে গিয়েছেন।’
রাবাদা, মরকেলের বলে অবলীলায় পুল খেলে সীমানা ছাড়া করা ব্যাটসম্যান হারিয়ে যাবার নয়! বাউন্সারে কপোকাত না হয়ে পেরিস্কোপের মতো শট খেলা ব্যাটসম্যান, শর্ট অব লেংথের বলে দৃষ্টিনন্দন অফ ড্রাইভ খেলা ব্যাটসম্যান হারিয়ে যাবার নয়! ওয়ার্ল্ডকাপে অস্ট্রেলিয়ার ব্যাটিং লাইনআপে চিড় ধরাতে ব্যর্থ মুস্তাফিজ, সাইফুদ্দীন, ম্যাশরা। ক্যারিয়ারের অনেকটা সময় বোলিং করবেন কিনা দ্বিধায় থাকায় সৌম্য-ই এনে দেন প্রয়োজনীয় ব্রেকথ্রু! তিন উইকেট নিয়ে সেদিন দলের সেরা বোলারটির নামও যে সৌম্য!
সৌম্য নিজের দ্বিধা জয় করবেন। অন্যদের সংশয় দূর করবেন। সেই দিনের স্বপ্ন দেখি। সৌম্যদের প্রজন্ম সেই পর্যায়ে গেলে আমাদের ক্রিকেটও নতুন উচ্চতায় উঠবে। নইলে যে আবার পেছন থেকে শুরু করতে হবে আমাদের!
সৌম্য ফুরিয়ে যাননি এই বিশ্বাসটুকু আমার রয়েছে। ক্যারিয়ারের শুরুর দিকের সৌম্যকে যারা দেখেছেন তারা নির্দ্ধিধায় বিশ্বাস রাখেন তিনি ফিরে আসবেন- ১৫’র সৌম্য হয়েই ফিরে আসবেন!